এর আগে একই ধরনের অভিযোগ তদন্তে মতিঝিল থানাকে নির্দেশ দেয় ঢাকার এক মহানগর হাকিম।
Published : 20 Aug 2024, 05:54 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে।
ওই আবেদনে ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ধানমন্ডির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এই আবেদন দাখিল করেন।
তামিম বলেন, “শাপলা চত্বরে হত্যাকে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে তদন্ত চেয়েছি এবং এর বিচার যেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হয়, সেই আবেদন করেছি। সেখানে আমরা ১৯ জনকে আসামি করেছি।”
তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য, প্রাক্তন আইজিপি, তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এর আগে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা, ১৪ দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগসহ অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। তার দলের বেশির ভাগ নেতা এখন আত্মগোপনে আছেন, কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ১৪ অগাস্ট সাংবাদিকদের বলেন, জুলাইয়ে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা।
এরপর সেদিনই শেখ হাসিনাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে তদন্তের আবেদন জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর শেখ হাসিনাসহ যাদের নামে গণহত্যার অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী এম এইচ তামিম।
তদন্ত কার্যক্রমে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত সংস্থা আসামিদের প্রোফাইল ইতোমধ্যে রেডি করেছে। ঘটনার পটভূমি রেডি করেছে। এখন তারা অপেক্ষায় আছে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের।”
এর আগে রোববার হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হলে তা মতিঝিল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম জাকী-আল ফারাবী।
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।
শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে