Published : 19 Aug 2024, 01:57 AM
কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতন আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতার তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ ও পরামর্শ তুলে ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ককে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম- আইসিএসএফ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা আইন বিশেষজ্ঞদের লন্ডনভিত্তিক সংগঠনটি শনিবার ওই খোলা চিঠি প্রকাশ করে।
সংগঠনটি বলেছে, “জাতিসংঘ বা জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন তদন্ত যেন বিস্তৃত পরিসরে বাংলাদেশের মানুষের একত্রিকরণ এবং উপশমের প্রক্রিয়া হয় এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য যেনতেনভাবে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ভিত্তি যেন না হয়; কারণ তা প্রতিশোধের রাজনীতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।”
জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি ‘শুধু’ ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত করবে, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের এমন বক্তব্য তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, “যেহেতু ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা করা জাতিসংঘের লক্ষ্য, সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, এই তদন্তের ক্ষেত্রে ৫ অগাস্টের আগে-পরে সব ঘটনা যেন দেখা হয়।”
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হত্যার পাশাপাশি সাধারণ নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ ও হত্যা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দলের কর্মীদের উপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ ও হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের উপর হামলা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যম ও বিচারিক স্বাধীনতার উপর হামলা, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতাদের উপর হামলা প্রভৃতি বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে খোলা চিঠিতে।
তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে তদন্ত করার পরামর্শ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য এখানে তাড়াহুড়া যেন করা না হয় এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ যেন সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
মিথ্যা তথ্য ও অপতথ্যের বিষয়ে সতর্ক থেকে তদন্ত কাজ পরিচালনা, সাক্ষীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শও এসেছে আইসিএসএফের খোলা চিঠিতে।
বিগত সরকারের নেওয়া তদন্ত ও জবাবদিহিতার উদ্যোগকেও তদন্তের জন্য বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ চিঠিতে দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত, বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের করা জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।
“আইসিএসএফ বিশ্বাস করে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে হুট করে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব উদ্যোগ জাতিসংঘের তদন্তের ক্ষেত্রে মূল্যবান অন্তদৃষ্টি যোগাতে পারে,” বলা হয়েছে চিঠিতে।
আইসিএসএফ বলছে, বিগত সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে সেসব ঘটনার সঙ্গে আসামিদের ‘স্পষ্ট’ কোনো সংযোগ নেই। সেটা জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন তদন্তের ‘পরিপূরকও’ হবে না।
“সে কারণে বিচার যেন যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হয় এবং এক্ষেত্রে যেন অন্যথা না হয়, সে বিষয়ের গুরুত্ব জাতিসংঘ যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে তুলে ধরে।”
গত পাঁচ সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের তথ্য, ছবি-ভিডিও সংগ্রহে আইসিএসএফের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশ কনফ্লিক্ট ওয়াচ’ শিরোনামে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কথাও তুলে ধরা হয় চিঠিতে।