ফুটেজে দেখা যায় বারিধারার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে কনস্টেবল মনিরুলকে দুই ধাপে কয়েক ডজন গুলি করেন কনস্টেবল কাউসার।
Published : 09 Jun 2024, 07:46 PM
বারিধারার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে পুলিশের এক কনস্টেবলের গুলিতে আরেকজন কনস্টেবল নিহত হওয়ার পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। ভিডিওটি ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতেও এসেছে।
এতে দেখা যায়, প্রথমে গার্ডরুমের ভেতরে থাকা কনস্টেবল কাউসার আহমেদের সঙ্গে বাইরে থাকা কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের কয়েক সেকেন্ড কথা হয়। এই কথার ফাঁকেই ভেতর থেকে কাউসার খুব কাছ থেকে গুলি করলে মনিরুল রাস্তায় পড়ে যান।
পরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে কাউসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে এসে রাস্তায় পড়ে থাকা মনিরুল দেহ লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এরপরেই নিথর হয়ে যায় মনিরুলের দেহ।
শনিবার রাতে বারিধারার দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হন মনিরুল। টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে তাকে গুলি করেন কাউসার।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, তারা ভিডিও ফুটেজ পেয়েছেন এবং সে অনুযায়ী দেখা যায় হত্যাকারী একজনই।
এই ঘটনায় মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহবুবুর হক মামলা করেছেন, তাতে আসামি করা হয় কাউসারকে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
ফুটেজে যা দেখা যায়
তিন মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজটিতে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম অস্ত্র নিয়ে গার্ড রুমের বাইরে লাগোয়া ফুটপাথে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।কিছুক্ষণ পর কাউসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে আসেন।
মনিরুল এ সময় কাউসারের কাছে আসেন এবং একটু দূরত্ব রেখে তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এরপরেই কাউসার ভেতরে ঢুকে যান এবং গার্ডরুম লাগোয়া ফুটপাথ দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন মনিরুল।
গার্ডরুমের থাই গ্লাস সরিয়ে কাউসারের সঙ্গে মনিরুলের আবার কথা হয়।এ সময় তাকে হাত নাড়াতে দেখা যায়। পরে তিনি গার্ডরুমের আরো কাছে আসেন এবং কয়েক সেকেন্ড পরেই ভেতর থেকে কাউসারের অস্ত্র গর্জে উঠে।
সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় না দিয়ে কাউসার বাইরে এসে তার শরীর লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এরপরেই মনিরুলের দেহ নিথর হয়ে যায়।
আদালতে পাঠানোর রিমান্ডের আবেদনে পুলিশ বলছে, ডিউটি করা নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিণ্ডার এক পর্যায়ে কাউসার গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে এরপর বাইরে এসে গুলি করার পর মনিরুলের চাইনিজ রাইফেলটি নিয়ে ফুটপাথে উঠে পাশের দেয়ালে আঘাতও করেন।
কিছুক্ষণ ওই অস্ত্রটি ফুটপাথে রেখে নিজের অস্ত্র নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ঘাড়ে নেন কাউসার। পরে ফুটপাথে দাঁড়িয়েই কাছাকাছি এসে লাশের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।
ওসি মাজহারুল জানান, মনিরুলের মরদেহ কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর তা সেই পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করা সাজ্জাদ হোসেনের চোখে পড়ে। তিনি জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক।
সাজ্জাদ মরদেহটি দেখে এগিয়ে যান। তখন কাউসার তাকে লক্ষ্য করেও কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। আহত হয়ে সাজ্জাদ বেশ কিছুদূর গিয়ে পুলিশের একটি গাড়ির সামনে পড়ে যান। পরে তাকে পুলিশই ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ৩৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন কাউসার। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের দেহ তাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে সাজ্জাদের শরীরের তিনটি গুলি লাগে। এর দুইটি পেটে এবং একটি হাতে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত। তবে এই দৃশ্য সিসি ফুটেজে ধরা পড়েনি।
কাউসারকে যেভাবে ধরা হল
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাজ্জাদকে গুলি করার মধ্যেই কাউসারের অস্ত্রে গুলি আটকে যায়। এর পরেই তিনি অস্ত্র ফুটপাথে রেখে সিগারেট ধরান এবং অস্ত্র থেকে একটু দুরে আসেন।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহনুর রহমান জানান, এরপরেই পেছন কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে জাপটে ধরে হেফাজতে নেন।
গুলি করে হত্যা করার পর তার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল উল্লেখ করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ধরা পড়ার পর কাউসার দাবি করেন, গুলির ঘটনার কিছুই মনে নেই।
মনিরুলের মরদেহ সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়নি। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহনুর রহমান জানান, পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ গ্রহণ না করে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের করা সুরতহাল প্রতিবেদন চায়। বিকালের পর জেলাপ্রশাসক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির অনুমতি দেন।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সোহেল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি বড় ঘটনা। পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। এটা একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সুরতহাল গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।”
আরও পড়ুন