ঈদে লম্বা ছুটির কারণে শেষ সময়ের দিকে টার্মিনালে যাত্রীর চাপ কম থাকার কথা বলছেন বাসকাউন্টার কর্মীরা।
Published : 29 Mar 2025, 11:39 PM
ঈদের ছুটিতে ‘পা ফেলার জায়গা’ থাকে না রাজধানীর সায়দাবাদ টার্মিনালে, যদিও এবারের চিত্র উল্টো। দেখে যেন বোঝার উপায় নেই ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ কাউন্টার ফাঁকা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও তিন পার্বত্য জেলার বাসগুলো যাত্রীর পেতে হাঁকডাক দিচ্ছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে চলা বাসগুলো পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে। বাস কাউন্টারে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
এবারের রোজার ঈদে লম্বা ছুটির কারণে শেষ সময়ের দিকে টার্মিনালে যাত্রীর চাপ কম থাকার কথা বলছেন কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতারা। যদিও আগের বছরগুলোতে ঈদযাত্রার শেষ সময়ে উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত। বাসের ইঞ্জিন কাভারেও বসার জায়গা হত না। সেই সুযোগে ভাড়া গুণতে হত দ্বিগুণ। এবারও ভাড়া বেড়েছে তবে আগের মত বেশি না হওয়ায় খুশি যাত্রীরা।
সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে শনিবার ‘দিগন্ত এক্সপ্রেসের’ কাউন্টারের দিকে যাত্রী আকর্ষণ করছিলেন মোহাম্মদ সোহেল। এ টার্মিনাল থেকে হবিগঞ্জের পথে তিন দিন ধরেই ‘দিগন্ত এক্সেপ্রেসের’ সবকটি বাস ১০টি পর্যন্ত আসন ফাঁকা রেখে ছেড়ে গেছে।
শনিবারও ৩৩ আসনের একটি বাস ২৫ জন যাত্রী নিয়ে হবিগঞ্জের দিকে ছেড়ে যায়। অন্যান্য রুটের তুলনায় এই পথে যাত্রী কম হলেও আগে টিকেট পাওয়া দুষ্কর হত ঈদের সময়।
কাউন্টার সহকারী মোহাম্মদ সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের সময় তো কাউন্টারের সামনেই বহনোর (বসার) জায়গা হইত না। মাইনষে পেপার বিছাইয়া বইত। এহন দ্যাহেন কাউন্টারের ভেতরের চেয়ার ফাঁকা আছে।”
হবিগঞ্জের মত চট্টগ্রাম, সিলেট রুটেও যাত্রী কম। বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ডাকছেন হেল্পাররা।
তবে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগের হাট, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর রুটের অবস্থা ভিন্ন। যাত্রী বেশি থাকায় বাস কাউন্টারে আসার সঙ্গে সঙ্গে আসন পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
টঙ্গী থেকে বেসরকারি চাকরিজীবী দবিরুল ইসলাম শনিবার সায়াদাবাদ আসেন, যাবেন বরিশালে। সকাল সাড়ে ৯টায় টার্মিনালে এসে বরিশালগামী সার্বিক পরিবহনের ১০টার বাসে উঠে পড়েন। সরাসরি বরিশাল যাওয়ার কোনো বাস না পেয়ে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর পর্যন্ত টিকেট কাটেন দবিরুল। সেখান থেকে পরের বাসে আরও ৬০ কিলোমিটার গেলে বরিশাল।
অন্য সময়ে মোস্তফাপুর পর্যন্ত ৩৫০ টাকা ভাড়া হলেও এবার ৬০০ টাকা গুণতে হয়েছে দবিরুলকে। তিনি বলেন, “ডাইরেক্ট গাড়ি এখন নাই। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলে পাওয়া যবে। এখানে বসে না থেকে বাড়ির দিকে আগাই। ব্যবস্থা একটা হয়েই যাবে।”
বেলা ১২টার দিকে যাত্রীর চাপ একেবারে কমে গেলে বরিশালগামী ঈগল, বিএমএফ ও গোল্ডেন লাইনের কর্মীরা যাত্রী পেতে হাঁকডাক শুরু করেন। সেসময় উপস্থিত কিছু যাত্রী একসঙ্গে টিকেট কিনতে ভিড় করে গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের সামনে।
স্বাভাবিক সময়ে ৫০০ টাকায় বরিশাল যাওয়ার টিকেট পেলেও এবারের ঈদ ঘিরে ২০০ টাকা বেশি লাগার কথা বলেন যাত্রীদের একজন রিফাত উদ্দিন। তিনি বলেন, “দামাদামি করতে দিল না। ৭০০ টাকাই নিল। তবুও তো পাইলাম। গতবার তো ১ হাজার টাকা নিছিল ঈদের সময়ে।”
ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠায় শনিবার পুলিশ, ভোক্তা অধিদপ্তর ও বিআরটিএর দল অভিযানও চালিয়েছে সায়দাবাদ ও যাত্রাবাড়ীর বাস কাউন্টারগুলোতে।
নোয়াখালীতে যেতে এদিন সায়বাদ টার্মিনালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসেন রিপন সরকার। বেলা ১২টার দিকে কোনো কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে সড়কের একটি জায়গায় দাঁড়ান চলতি বাসে ওঠার জন্য।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রিপন বলেন, “কাউন্টারের লোক বলল অপেক্ষা করতে। এখন চেষ্টা করতেছি রানিং কোনো বাসে উঠা যায় কিনা। ইঞ্জিনকভারেও যদি একজনের জায়গা পাই, তাহলে আমি দাঁড়িয়ে যাব।”
নোয়াখালী রুটের তিশা পরিবহনের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, “যাত্রীর চাপ এবার তেমন একটা নাই। যারা আসছে, তাদের পাঠাতে পারছি। দিনে আর কোনো গাড়ি দিতে পারব না। যেগুলা গেছে, তারা ফেরত আসতেছে, পথে আছে। বাস আসলে সেগুলো আবার যাত্রী নিয়ে যাবে।”
সন্ধ্যার আগে নতুন করে টিকেট দিতে না পারার কথা বলেন হিমাচল এক্সপ্রেস বাসের কর্মীরা। ঢাকা থেকে মাইজদী-সোনাপুর পর্যন্ত চলা এ বাসের সহকারী মোহাম্মদ রুবেল বলেন, “একটায় গাড়ি নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা। আমার গাড়ি এখনও আসেনি। না আসা পর্যন্ত টিকেট বেচাও বন্ধ। গাড়ি আসলে আবার যাবে।”
নোয়াখালী-ফেনী রুটে চলাচলকারী একুশে এক্সপ্রেসের কাউন্টারের কর্মী বেলাল হোসেন বলেন, “গাড়ি বেশি নামানো হইছে। গতকাল রাতে সব গাড়ি ঢাকার বাইরে গেছে, কিছু ভোরেও গেছে। এখন আসার কথা। রাস্তায় আছে, ফেরত আসতে জ্যামে আটকে গেছে। বাস আসলে নতুন টিকেট বিক্রি শুরু হবে। কখন আসবে বলা যাচ্ছে না।”
ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে কাউন্টার কর্মীদের যুক্তি মেনে নিচ্ছেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী ভরপুর থাকলেও ফেরার পথে খালি বাস নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে কাউন্টার থেকে।
সার্বিক পরিবহনের টিকেট বিক্রয় কর্মী সোহাগ সরদার বলেন, “মালিকে তো টিকেটের দাম ঠিক করে। আমাগো হাতে কিছুই নাই। ঢাকা থেকে যাত্রীর অভাব নাই। ফেরত আসার সময়ে তো বাস ফাঁকা। তেলের টাকাও উঠে না। তাই বেশি নেওয়া ছাড়া তো উপায় নাই।”