Published : 20 Oct 2024, 04:29 PM
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করার বিধান ফিরে আসায় বিচারকদের নিয়ে ‘বিভিন্ন মহলে জমে থাকা ক্ষোভ’ নিরসনের একটি ‘সুযোগ তৈরি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ ঘটনা ‘বিশেষ তাৎপর্য’ বহন করছে।
আসিফ নজরুল বলেন, “রিভিউ মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুত্থিত হয়েছে। এটা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিল, আজকে আদালতে রায়ের মাধ্যমে সেই কনফিউশন দূর হয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখন পুরোপুরি অপারেশন করা যাবে।
"আমাদের হাই কোর্টে কিছু বিচারক রয়েছেন, উনাদের বিষয়ে সমাজের প্রতিটা স্তরে প্রচুর কমপ্লেইন রয়েছে। উনারা জুলাই গণবিপ্লবে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন। কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। তাদের বিষয়ে ছাত্র জনতার অনেক ক্ষোভ রয়েছে।
“এ সমস্ত ক্ষোভ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিরসনের একটা এভিনিউ তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি ছাত্র-জনতা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য একটা সুযোগ পাবে।"
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে টানাপড়েন তৈরি হয়। এরপর এক রিট মামলার রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।
২০১৭ সালের ওই রায়েই বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের ওই রায় সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনে নতুন মাত্রা দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও পরে আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি অপসারণে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং রিভিউ আবেদন ঝুলে থাকায় গত সাত বছরে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আর গঠন হয়নি। ফলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরও হাই কোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ঝুলে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের ‘দোসর’ বিচারকদেরও অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে গত সপ্তাহে ১২ জন বিচারককে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ষোড়শ সংশোধনী মামলা ফের আলোচনায় আসে।
আন্দোলনের সূত্র ধরে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদনটি রোববার আপিল বিভাগে ওঠে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে দিলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
এখন কোনো বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
ফলে বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, এই রিভিউ রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, "সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যখন ছিল না, তখন অনেক ফরমায়েশি রায় হয়েছে। তারেক রহমানের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, বহু মানুষ কোর্টে এসে মানবাধিকার রক্ষা করার সুযোগ পায়নি। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সুযোগ হয়েছে বলে মনে করি।"
পুরনো খবর...
বিচারপতি অপসারণ হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই: রিভিউ রায়
ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শিগগিরই: আইনমন্ত্রী
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
ষোড়শ সংশোধনী: রায় নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সংসদের