মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে সাবেক গাড়িচালকের পরিকল্পনায় ওই নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।
Published : 24 Aug 2023, 01:19 PM
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের এক নারী কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে গ্যারেজে আটকে নির্যাতন ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার সাবেক গাড়িচালক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ছয়দিন আগে গত শুক্রবারের ওই ঘটনায় অপহরণ-নির্যাতনের একটি মামলা হয়েছে রমনা মডেল থানায়। পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ওসি আবুল হাসান জানিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার মাসুমা খাতুন এনবিআরের যুগ্মকমিশনার (ট্যাক্স)। কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত তিনি। গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, গত ১৮ অগাস্ট রাত ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মাসুমা ও তার গাড়িচালককে মারধর করে কয়েকজন। এরপর সেখান থেকে মাসুমাকে তুলে নিয়ে সবুজবাগ থানা এলাকার একটি গ্যারেজে ১৮ ঘণ্টা আটকে রাখে তারা। সেসময় নির্যাতনে এই কর্মকর্তার পা ভেঙ্গে যায়। তার চোখও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাসুমার দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, “ওই দিন বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন এই কর কর্মকর্তা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পৌঁছালে তাদের গাড়িতে ধাক্কা দেয় একটি মোটরসাইকেল। চালক গাড়ি থেকে নামলে সংঘবদ্ধ কয়েকজন চাবি কেড়ে নিয়ে গাড়িচালক আনোয়ার ও মাসুমাকে মারধর শুরু করে।
এরপর আনোয়ারকে রেখে মাসুমা ও তার গাড়ি সবুজবাগের একটি গ্যারেজে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। মাসুমার মুখ টেপ দিয়ে আটকে রাতভর মারধর করা হয়। পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে আটকে রেখে নির্যাতন চলে।”
ওসি আব্দুল হাসান বলেন, “দুপুর ২টার পর দুর্বৃত্তরা তাদের চক্রের দুই-তিনজনকে গাড়ি পাহারায় রেখে খাবার কিনতে যায়। ওই সুযোগে মাসুমা খাতুন গাড়ি থেকে নেমে চিৎকার শুরু করেন।
“এরপর আশপাশের লোকজন এগিয়ে তাকে উদ্ধার করে। অপহরণকারীদের তিন সদস্যকে আটক করে শাহবাগ থানায় খবর দেয় তারা। পরে সবুজবাগ থানার পুলিশ মাসুমাকে উদ্ধার করে এবং ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।”
মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে মাসুমার সাবেক গাড়িচালক মো. মাসুদের পরিকল্পনায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান রমনা থানার ওসি।
মাসুদকে ‘সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “মাসুদই পরিকল্পনা করে তাদের বাহিনীর সদস্যদের তথ্য দেয়। মাসুমা খাতুনকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগীদের নিয়ে মাসুদ এই ঘটনা ঘটায়।”
এজাহারে মাসুদসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন এনবিআরের ওই কর্মকর্তা। ঘটনার সময় গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত রাজু নামের তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাসুদসহ এই চক্রে চারজন রয়েছেন এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে ওসি আবুল হাসান বলেন, অপহরণের রাতে যুগ্ম কমিশনার মাসুমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। তাকে অপহরণ করতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে, এমন আশ্বাস মাসুদ দিয়েছিলেন তার সহযোগীদের।