খানজাহানের দিঘিতে কুমির প্রজননের উদ্যোগ

বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজারের দিঘিতে মিঠা পানির কুমিরের কৃত্রিম প্রজননের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

অলীপ ঘটক বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2015, 02:54 PM
Updated : 8 April 2015, 02:54 PM

এ লক্ষ্যে কুমিরের ২২টি ডিম সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে রেখে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. নূরুল আমীন।

তিনি জানান, এর আগে মাজার দিঘিতে ২০০৫ সালে মিঠা পানির প্রজাতির কুমিরের (মার্শ ক্রোকোডাইল) বিলুপ্তি ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকারের এ বিভাগ।

এ লক্ষ্যে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে মিঠা পানির প্রজাতির ছয়টি কুমির এনে অবমুক্ত করা হয়েছিল খানজাহান আলীর মাজার দিঘিতে।

এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক ও ঢাকা চিড়িয়াখানায় অবমুক্ত করা হয় আরও কয়েকটি কুমির।

তিনি জানান, ভারত থেকে আনা ওই ছয় কুমিরের মাত্র দুটি এখন অবশিষ্ট আছে মাজার দিঘিতে।

নূরুল আমীন টিকে থাকা দুই কুমিরের মধ্যে মেয়ে কুমিরটি প্রতি বছর ডিম পাড়লেও বাচ্চা ফুটছে না। গত মার্চে আবারও ৫৫টি ডিম পাড়ে ভারত থেকে আনা ওই মেয়ে কুমির।

নূরুল আমীন বলেন, “ওই ডিম থেকেই ২২টি ডিম সংগ্রহ করে সোমবার থেকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে বলে আশা করছি।”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই এ কাজে বিনামূল্যে ইনকিউবেটর দিয়ে সহযোগিতা করেছে, যেটি বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কুমির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মাজারের দিঘিতে থাকা একটি মিঠা পানির কুমিরের ডিম সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, ‘কালাপাহাড়’ আর ‘ধলাপাহাড়’ এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ মাজারের পীর সাহেবের স্মৃতি (কুমির) হারিয়ে গেছে।

কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর এ উদ্যোগ সফল হলে দিঘির ঐতিহ্য রক্ষা পাবে বলে মনে করেন তিনি।

শের আলী আরও বলেন, “২০০৩ সালেও ‘রামুলাস আর্ল হুইটকার’ নামে একজন কুমির বিশেষজ্ঞ মাজারের কুমিরের ডিম ইনকিউবেটরে রেখে ফোটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই ডিম নিষিক্ত না হওয়ায় ফোটেনি।”

পরে জানা যায় অতিরিক্ত চর্বিজনিত কারণে তখনকার পুরুষ কুমিরগুলো প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছিল।

এই ডিমগুলো যথাযথভাবে নিষিক্ত না হয়ে থাকলে এবারের উদ্যোগও ভেস্তে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হযরত খান জাহান আলী (রহ.) সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে বাগেরহাটে ‘খলিফতাবাদ’ নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি ‘ঠাকুর দিঘি’ নামে পরিচিত এ দিঘিটি সংস্কার করে এখানে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে মিঠা পানির প্রজাতির এক জোড়া কুমির ছাড়েন।

তার মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। পরে ওই কুমির যুগলই বংশ বিস্তার করে ৬০০ বছর ধরে বংশানুক্রমে এ দিঘির উন্মুক্ত পরিবেশে বসবাস করে আসছিল।