রিভিউ আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে ‘বিচার প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তির’ পর এখন ক্ষমা প্রার্থনা ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Published : 06 Apr 2015, 12:03 PM
সোমবার আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের রায় দেওয়ার পর নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায় এবং রিভিউর রায় হয়ে গেছে। এখন দুটি বিষয় বাকি আছে। রাষ্ট্রপতির কাছে উনি ক্ষমা ভিক্ষা চাইবেন কি-না এবং দ্বিতীয়ত, আপনজনের সঙ্গে উনার দেখা করা।
‘তার পরের বিষয় হলো, কখন দণ্ড কার্যকর হবে। সেটা সরকার নির্ধারণ করবে।”
রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আসামি কখন প্রাণভিক্ষা চাইবেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বিধান নাই। এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
“তবে এর মানে এই নয় যে, ৭ দিন বা ১৫ দিন সময় পাবে। জেল কর্তৃপক্ষ এটা তাকে (কামারুজ্জামানকে) জানাবে, জানানোর পর একটি সময় প্রদান করা। সেটা বিবেচনা করবে জেল কর্তৃপক্ষ।”
আর কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তার নিষ্পত্তি করবেন উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, উনি বিবেচনা করবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সেই ফাইল ৭ দিনও থাকতে পারে আবার ১৫ দিনও থাকতে পারে।
“আবার রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, উনি বিবেচনা করবেন না। পাওয়ার সাথে সাথে এক ঘণ্টার ভেতরে ফেরত পাঠাতে পারেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না।
এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও কাদের মোল্লার মামলায় রিভিউ খারিজের দিনই দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জানতে চান, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও তেমনটি হচ্ছে কি-না।
“সুতরাং তার ব্যাপারে সব রীতিনীতি মেনেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এখানে কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে এখনো দুটি বিষয় বাকি আছে। প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি-না, পরবর্তীতে উনার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কখন দণ্ড কার্যকর করা হবে, কি হবে না, সেটা এখন মুখ্য বিষয় না। মুখ্য বিষয় হলো, তার দণ্ড বহাল আছে। কার্যকরের দিন সরকার নির্ধারণ করবে।”
অন্য ফাঁসির রায়ের মতো এই যুদ্ধাপরাধ মামলার ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না বলেও জানান তিনি।
রিভিউ খারিজের রায় কিভাবে কারাগারে যাবে- এ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আপিল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি জানানো হবে। ট্রাইব্যুনাল কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবে। সুপ্রিম কোর্টও সরাসরিও কারা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।
“আরেকটি কথা হলো, যেহেতু উনার আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন, যদি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, আইনজীবী তার প্রতিনিধিত্ব করে।... আইনজীবীতো জেনেই গেছে। আইনজীবীর জানাই উনার জানা। তারপরও একটা কথা থাকে, উনি জেলে আছেন, সেক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ তাকে জানাবেন।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। গতবছর ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের রায়েও ওই দণ্ড বহাল থাকে।
শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। সেই পরোয়ানা অনুযায়ীই তার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া চলবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।
এর আগে আপিল বিভাগে আসা যুদ্ধাপরাধের প্রথম মামলার চূড়ান্ত রায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আজীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।