অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার সময় পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ কারণ কী, তা জানতে চেয়েছে সংসদীয় কমিটি।
Published : 22 Mar 2015, 05:19 PM
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, “অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে।
“এজন্য আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। কমিটির আগামী বৈঠকে পুলিশকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদীয় কমিটির এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচ্যসূচি ছিল না। তবে বিভিন্ন মহলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি পুলিশের কাছে এর ব্যাখ্যা চায়। জবাবে পুলিশ বলেছে, তারা লিখিত আকারে এ বিষয়ে জানাবে।”
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে অভিজিত ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার সময় পুলিশ কাছাকাছি অবস্থানে থেকে দাঁড়িয়ে দেখলেও হামলাকারীদের ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যা।
বই মেলা চলাকালে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
তবে এই ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ প্রধান শহীদুল হক। পুলিশ অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, কিন্তু তার আগেই হত্যাকারীরা জনগণের মাঝে মিশে যায় বলে দাবি করেন আইজিপি।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তদন্তে এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যুগ্ম কমিশনার রেজাউল করিম প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়।
ঘটনার পরে তদন্তে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
মুক্তমনা ব্লগসাইটের পরিচালক, লেখক অভিজিৎ রায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকি পাওয়া তাদের ঘিরেই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালানোর কথা বলে আসছিল পুলিশ।
হত্যামামলায় যে একজনকে এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ফারাবী শফিউর রহমানও ফেইসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে লিখেছিল, বাংলাদেশে ফিরলে অভিজিৎকে হত্যা করা হবে।
ঘটনার পরে প্রায় মাস গড়াতে গেলেও অভিজিৎ রায়ের খুনি কারা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “অভিজিৎ রায় হত্যার সময় অনেক মানুষ সেখানে ছিল। তারপরও কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছে না, হত্যাকাণ্ডে কতজন অংশ নিয়েছিল। তারা দেখতে কেমন, তাও কেউ পুলিশকে জানাতে পারেনি।”
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সংক্রান্ত সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চলমান নাশকতা ও সন্ত্রাস দমনে আইনী জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ সংক্রান্তে পুলিশের জনবল মঞ্জুরি প্রাপ্তি সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পুরুষ পদে ৮৫০০ জন এবং নারী পদে ১৫০০ জনসহ সর্বমোট ১০০০০ জন কনস্টেবল এর নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৬০০ জন পুলিশ সার্জেন্ট (পুরুষ/নারী) পদে নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সহিংসতা ও নাশকতা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। কমিটি দেশে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার সময় আটক ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুপারিশ করে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, মহাসড়কে চলাচলরত গাড়িতে ভিআইপি হর্ন, ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও জাতীয় সংসদের মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জোনাল সহকারী পুলিশ সুপারসহ হাইওয়ে রেঞ্জের সকল থানা/ফাঁড়ির, ওসি/আইসিগণকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হযেছে।
টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, মো. মোজাম্মেল হোসেন, শামসুল হক টুকু, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম এবং কামরুন নাহার চৌধুরী অংশ নেন।