পুলিশের ‘নাকের ডগায়’ এ হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না মন্তব্য করে ‘দায়িত্বে গাফিলতির’ জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে বক্তব্যে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইমাম, যেখানে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও ছিলেন।
মুক্তমনা লেখক অভিজিৎকে হত্যা লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি দিতে না পারার ফল বলেও মনে করেন তিনি।
“এত পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন আজাদকে যেভাবে হত্যা করা হলো, এই কেসটি যথাযথভাবে তদন্ত করে যদি শাস্তি দেয়া যেত, তাহলে মনে হয়, অভিজিতের ঘটনা ঘটতো না,” বলেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
কয়েক গজ দূরে পুলিশের অবস্থানের মধ্যেই অভিজিতের ওপর হামলা নিয়ে তিনি বলেন, “সেদিন যে অভিজিৎ হত্যা হলো পুলিশের নাকের ডগায়, সেটি কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়।”
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির উত্তর পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক অভিজিৎ রায়কে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপরও হামলা হয়।
অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার সময় পুলিশ কাছাকাছি অবস্থানে থেকে দাঁড়িয়ে দেখলেও হামলাকারীদের ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যা।
এই সব পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
“যারা করছে না, আমি ধরে নিব, তারা এই সার্ভিসের ‘ব্ল্যাকশিপ’। এদেরকে খুঁজে বের করুন, শাস্তি দিন। তাহলে পুলিশের ওপর গণমানুষের আস্থা ফিরে আসবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনও হবে না।”
যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ও দশম সংসদ নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালে পুলিশের ওপর যে সব হামলা হয়েছে, থানায় আক্রমণ হয়েছে সেসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগাদা দেন এই উপদেষ্টা।
অভিজিতের মতো আর কেউ যাতে এ ধরনের হামলার শিকার না হয় তার জন্যই এগুলোর সুরাহা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘জার্নি’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
এইচটি ইমাম ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আলোচনায় অংশ নেন।
আইজিপি শহীদুল হক ছাড়াও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, একাত্তরে মুজিবনগর সরকারের গার্ড অব অনার প্রদানকারী মাহবুবউদ্দিন আহমেদ, শহীদ পুলিশকন্যা ফারজানা শাহনাজ মজিদ উপস্থিত ছিলেন।
জার্নির প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম।