সংবিধান সংশোধন: কারো মত নেবে না সংসদীয় কমিটি

বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা আইনপ্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের বিল পরীক্ষা শেষ করেছে সংসদীয় কমিটি।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2014, 11:27 AM
Updated : 10 Sept 2014, 07:16 PM

বিল পরীক্ষার সময় সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়ার কথা আগে বললেও সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখন বলছেন, কারো মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

বিএনপির আপত্তির মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করবে বলে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আগে জানালেও এখন তাদেরও অবস্থান পাল্টেছে।

সংবিধান সংশোধনের এই প্রস্তাব গত রোববার সংসদে উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়ে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কমিটি দুই দিন বিলটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। সাতদিনের সময় দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যেই কমিটির রিপোর্ট সংসদে দেওয়া হবে।”

দুই-এক দিনের মধ্যে ‘পারলে’ বৃহস্পতিবারই কমিটি সংসদে প্রতিবেদন দিয়ে দেবে বলে জানান তিনি।

সংসদীয় কমিটির পরীক্ষায় বিলের প্রস্তাবনা বাদ দেয়া হচ্ছে বলে সুরঞ্জিত জানান, যা অপ্রয়োজনীয় বলে একদিন আগেও বলেছিলেন তিনি।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, বিলটি তার কমিটিতে এলে তিনি সুপ্রিম কোর্ট, বার কাউন্সিল এমনকি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিরও মতামত নেবেন

সে মতামত নেওয়ার বিষয়ে সোমবার এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের মতও জানতে চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি।

তবে বুধবার সুরঞ্জিত বলেন, “আমরা ’৭২ এর সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৯৬ হুবহু প্রতিস্থাপন করেছি। এখানে নতুন কিছু নেই। সে কারণে আলোচনার দরকার নেই। তবে নতুন আইন করার সময় সকলের মতামত নেওয়া হবে।”

ফাইল ছবি

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আগেও বলেছি, বিলটি পাস হওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে আইন করা হবে। আইন করার সময় নিশ্চয়ই আমরা সকলের মতামত নেব।”

উত্থাপিত বিলে কোনো বিচারপতির অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে ‘তদন্ত ও প্রমাণ’ আইন করে সংসদের নিয়ন্ত্রণ করার শর্ত রাখা হয়েছে।

এর ব্যাখ্যায় সুরঞ্জিত মঙ্গলবার বলেছিলেন, “কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে তাহলেই কি তাকে অপসারণ করা হবে? তা নয়। এর জন্য ফলো-আপ আইন হবে। ওই আইনে তদন্ত কমিটির বিধান থাকবে। সংশ্লিষ্ট, দায়িত্বশীল, প্রাসঙ্গিক লোকদের দিয়ে করা হবে।

“তারা সংসদে বিষয়টি পাঠালে সংসদ শুধু অনুমোদন দেবে। অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। তিনিই নিয়োগ দেন, সরাবেনও তিনি।”

বিচারপতিদের ‘অসামর্থ্য’ ও ‘অসদাচরণ’ তদন্তে কমিটি প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বুধবার বলেন, “এই কমিটিতে কারা থাকবে, সেটাই মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন। সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। জুডিশিয়ারি থেকেও লোক থাকবে। সবাইকে নিয়েই করা হবে।”

সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের বিরোধিতায় ড.কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে আইনজীবীদের ‘সর্বদলীয় কমিটি’ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যার যার কথা বলার অধিকার রয়েছে। তারা যেটা করেছে সেটায় তো আইনভঙ্গ হচ্ছে না। এখানে বলার কিছু নেই।”

তবে সুরঞ্জিত বলেন, “যারা এটা করছে, তারা বিভ্রান্তি থেকে বলছেন। আশা করি, তাদের বিভ্রান্তি কেটে যাবে।”

ফাইল ছবি

ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের সঙ্গে ৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে থাকা সুরঞ্জিত বলেন, “যারা বলছেন এই সংসদ অবৈধ। তাদের বলছি সংসদ মানেন না, কোর্টকে তো মানেন। সংসদ না মানলে তো কোর্টও মানেন না।

“তারা সংবিধান প্রণেতা। তাদের আমরা রেসপেক্ট করি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোর্টকে কলুষিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না। বরং এটাকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে। জবাবদিহিতা আরও স্বচ্ছ হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত ও আনিসুল হকের সঙ্গে থাকা কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা বলেন,তারা সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করবেন না।  

“বিরোধী দল হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, বিলের বিরোধিতা করব। বাইরেও প্রচার ছিল, সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই সরকার সংবিধান সংশোধন করছে। কিন্তু বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে আমরা দেখেছি, এতে তেমন কিছু নেই। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে।”

গত ৩১ অগাস্ট সংসদীয় দলের বৈঠকে সংবিদান সংশোধন বিলের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পার্টি।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগ নিয়েছে।