দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার ঘটনায় দুই মামলার নথি হাই কোর্টে এসেছে।
Published : 06 Feb 2014, 09:59 PM
রায় এবং মামলা সংক্রান্ত অন্যান্য নথি বৃহস্পতিবার সকালে হাই কোর্টে এসে পৌঁছানোর পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ সংক্রান্ত শাখায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
৮-১০ জন পুলিশ সদস্য রুপালি রংয়ের একটি ট্রাঙ্কে করে ওই নথি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসেন, যে মামলায় সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধক একেএম শামসুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই এটা হাই কোর্টে এসেছে।”
ডেথ রেফারেন্সের শুনানির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বর্তমানে ২০০৯ সালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের শুনানি করছি।
“তবে প্রধান বিচারপতি চাইলে আগেও কোনো মামলার শুনানি হতে পারে। এটা প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বিশেষ আদেশে খালাফ হত্যা মামলার শুনানি হয়।”
“এখন পেপার বুক তৈরি হবে। আসামিরা চাইলে আপিল করতে পারবেন। এরপর মামলা শুনানির জন্য আসলে শুনানি হবে,” বলেন তিনি।
গত ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় করা চোরচালান মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মোট ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান।
ফাঁসির আদেশ পাওয়া এই ১৪ জনের মধ্যে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুর রহীম এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াও রয়েছেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
ওই ঘটনায় চোরাচালান ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন, যাদের মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।
চোরাচালান মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ বি ও ২৫ ডি ধারায় ১৪ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
একইসঙ্গে হাই কোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
আর অস্ত্র আইনের ১৯ এ ধারায় ওই ১৪ জনকেই দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া অস্ত্র আইনের মামলার ১৯ এফ ধারায় তাদের দেয়া হয়েছে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
উভয় সাজা যুগপৎ কার্যকর হবে। আর দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে যারা এতদিন কারাগারে ছিলেন, ওই সময় তাদের সাজা থেকে বাদ যাবে।
অস্ত্র উদ্ধারের পর ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে একটি এবং ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে অন্য মামলাটি দায়ের করা হয়।