স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা ব্রিজেট ডায়েস বলেন, “মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এই কর্মসূচি। স্কুলে ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কারণে বারবার ঘটনা ঘটছে। না হলে এমন হত না।”
Published : 05 Jul 2024, 11:04 PM
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুলের দুই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন অভিভাবকরা।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
যাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে, সেই দুই শিক্ষক রাকিব উদ্দিন ও সুরজিৎ পালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং স্থায়ী বহিস্কার, ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিরাপরাধর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে করা জিডি প্রত্যাহার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কন্যা শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেন বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষিকা, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রী এবং অভিভাবকরা।
সেন্ট স্কলাস্টিকাস স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা ব্রিজেট ডায়েস বলেন, “মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এই কর্মসূচি। স্কুলে ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কারণে বারবার ঘটনা ঘটছে। না হলে এমন হত না। রাকিব উদ্দিন ও সুরজিৎ পাল নামে ওই দুজন নরপিশাচকে বাঁচাতে স্কুলের ভেতর থেকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে।
“যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। স্কুলের প্রিন্সিপাল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্রী যৌন নিপীড়নে ঘটনা তদন্তে শুরুতে স্কুল একটি কমিটি করেছিল। তারা একটা ভুল তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ইচ্ছাকৃতভাবে। সেটিকে মৌখিকভাবে বাতিল বলে জানিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল। অথচ আসামিরা আদালতে অপ্রকাশিত সেই তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জামিন আবেদনও করেছিল।”
সাবেক শিক্ষিকা ব্রিজেট ডায়েস বলেন, “অতীতেও অভিযোগ আসার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো এবার যেই শিক্ষকরা ছাত্রী নিপীড়নের বিচার দাবি করেছেন তাদের নানাভাবে টর্চার করা হচ্ছে।
“এমনকি চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন প্রিন্সিপাল। শিক্ষকরা নাকি উনার কক্ষে গিয়ে উনাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এরকম হাস্যকর একটি অভিযোগ যিনি করেছেন তাকেই এর প্রমাণ দিতে হবে।”
মানববন্ধনে অভিভাবক আলী ইউসুফ বলেন, “আমরা পিতা-মাতারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি সন্তানের নিরাপত্তার জন্য। কতিপয় কুলাঙ্গার শিক্ষক ছাত্রীদের পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে যৌন হয়রানি করেছে। নরপিশাচরা সন্তানদের উপর কুদৃষ্টি দিয়েছে।
“দাবি করছি, মামলা যেন ভিন্ন খাতে পরিচালিত না হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। যতদিন সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে ততদিন আন্দোলন করব।”
জানে আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, “এর আগেও ঘটনা ঘটেছে। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্কুলের ভিতর থেকে ইন্ধন দিচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সন্তান শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।”
অভিভাবক সানজিদা মুমতাহা বলেন, “মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এই কর্মসূচি। স্কুলে এরকম ঘটনা বারবার ধামাচাপা দেয়ার কারণে এবারও ঘটছে। না হলে এমন হত না। ওই দুজন নরপিশাচকে স্কুলের ভিতর থেকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে।”
পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকাস বালিকা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১০ জুন।
পরদিন ১১ জুন শিক্ষক রাকিব উদ্দিনকে এবং পরে ২৫ জুন আরেক শিক্ষক সুরজিৎ পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পাথরঘাটা এলাকার সেন্ট স্কলাসটিকাস বালিকা বিদ্যালয়ে ১০ জুন দুপুরে স্কুল চলাকালীন সময়ে ওই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে শিক্ষক দুইজনের বিরুদ্ধে।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষক রাকিব চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান এবং সুরজিত পঞ্চম শ্রেণির একই বিষয়ের শিক্ষক। ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে হয়রানির চেষ্টা করেন দুই শিক্ষক।
সবশেষ ১০জুন টিফিন বিরতির সময় ষষ্ঠতলায় নিয়ে তারা ‘শ্লীলতাহানি’ করেন। এ অভিযোগে সেদিনই ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে