রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন রোডে কথিত পীরসহ ছয় খুনের তিন দিন পর পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তাদের সন্দেহের তীর ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দিকে।
Published : 24 Dec 2013, 05:27 PM
পুলিশের সন্দেহের তালিকার শীর্ষে রয়েছে হরকাত-উল জিহাদ। এরপরই জেএমবি আর হিযবুত তাহরীরের অবস্থান। জামায়াতে ইসলামীকেও সন্দেহ থেকে বাদ দেয়নি পুলিশ। এছাড়াও উগ্রপন্থী আরো কয়েকটি ছোট দলও রয়েছে এই তালিকায়।
মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঘটনার ‘মোটিভ’ সম্পর্কে অন্ধকারে থাকার কথা বললেও প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রপন্থী দলগুলোর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান।
অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, পুলিশ এখনো মূল খুনিদের সনাক্ত করতে পারেনি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বরে চার তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা মুরিদ সেজে ওই বাসায় ঢোকে এবং কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনির, পীরের খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ মো. শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারকে গলা কেটে হত্যা করে।
লুৎফর কখনো নিজেকে ইমাম মাহাদী, আবার কখনো তার প্রধান সেনাপতি বলে দাবি করতেন। তিনি ও তার অনুসারীরা ধর্ম পালন করতেন ‘নিজস্ব নিয়মে’।
মূলত এ কারণেই উগ্রপন্থীরা তাকে, তার ছেলেসহ আরো চার মুরিদকে হত্যা করে থাকতে পারে পুলিশ ধারণা করছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রধান সন্দেহ হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাত-উল-জিহাদকে। এই সংগঠনের কর্মীরাই কবি শামসুর রাহমানকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে চেয়েছিল। যদিও তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “হত্যার ধরন বিবেচনা করে হরকাত-উল-জিহাদকেই পুলিশ সন্দেহের তালিকার প্রথমে রেখেছে। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলটি হচ্ছে জেএমবি।”
এ ক্ষেত্রে উদারহণ টেনে তিনি বলেন, “ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এই সংগঠনের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান নিজে গলাকেটে মানুষ হত্যা করতেন- এমন প্রমান আছে পুলিশের হাতে।”
আর হিযবুত তাহরীর প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই সংগঠনটির গলাকেটে হত্যার অতীত ইতিহাস না থাকলেও খুনিদের বয়স বিবেচনায় তাদেরকেও আমরা আমরা সন্দেহের তালিকা রেখেছি।”
ঘটনার পর নিহত কথিত পীর লুৎফরের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, “খুনি আটজন ছিল। তাদের সবারই বয়স ছিল ত্রিশের নিচে। সাধারণত হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীরা কম বয়সী হয়ে থাকে। তাই এই সংগঠনকে পুলিশ সন্দেহ করছে।”
“খুনিরা সবাই প্যাণ্ট-শার্ট পরা ছিল। আর একজেনর মুখে ছিল দাঁড়ি। হত্যাকারীরা কোনো ছুরি ব্যবহার না করলেও একাধিক চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে।”
উচ্চ আদালতে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করা প্রসঙ্গে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “নিহত কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক জামায়াতের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা কথা বলতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাছাড়া জামায়াতকে তিনি ‘দাজ্জাল’ (ইসলামের শত্রু) বলতেন।”
খুনিদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের তিনটি দল কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।