হরতাল: জামায়াতের রফিককে তলব

রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় আদালত অবমাননার অভিযোগে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান মো. ইব্রাহিমকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2013, 10:30 AM
Updated : 5 August 2013, 12:26 PM

ফাইল ছবি

পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের অবকাশকালীন বেঞ্চ সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়।

বিবৃতি দিয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া এবং রায়ের প্রতিবাদে হরতাল ডাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে দুই জামায়াত নেতাকে।

তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।

গত ১ অগাস্ট হাই কোর্ট এক রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার পর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মো. ইব্রাহিমের স্বাক্ষরে বিবৃতি দিয়ে আগামী ১২ ও ১৩ অগাস্ট ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকেন রফিকুল ইসলাম খান, যিনি ট্রাইব্যুনাল অবমাননার দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে পলাতক রয়েছেন।

রায় প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, “অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী এ  রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

রফিকুলের ভাষায়, এটি একটি ‘ভুল’ রায়। এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের’ প্রতিফলন ঘটেছে।

ব্যারিস্টার মাসুদ রেজা সোবহান পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সোমবার আদালতের নজরে আনেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান।

আদেশের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবকাশকালীন বেঞ্চ আদালত অবমাননার রুল দিয়ে তাদের হাজির হতে বলেছে। ছুটির পর এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে হাজির হয়ে তাদের রুলের জবাব ও নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে হবে।”

মাসুদ রেজা সোবহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি আদালতকে বলেছেন যে, রাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদের সুযোগ আমাদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। আবার আদালতের রায়ের ক্রিটিসাইজও যে কেউ করতে পারে। কিন্তু হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দিয়ে দেশ অচল করে দেয়া যায় না।

“রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আপিল বিভাগে যেতে পারে। তাদের পক্ষের সব যুক্তি দিয়ে হাই কোর্টের যুক্তি খণ্ডন করতে পারে। কিন্তু দেশ অচল করা নয়। এখন হাই কোর্টের রায়ের পর এভাবে হরতাল দিয়ে পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে তারা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধেও রাস্তায় নামবে।”

তাছাড়া  ঈদের পরপরই মানুষ যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরবে, তখন এই হরতাল মারত্মক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষনেতাদের দণ্ডের আদেশের পর নিবন্ধন বাতিলের এই রায়ে স্পষ্টতই চাপের মধ্যে পড়ে জামায়াত।

গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রায়ের পর আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, এই রায় জামায়াত নিষিদ্ধের আইনি ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে।

তরিকত ফেডারেশনসহ কয়েকটি ইসলামী দলের রিট আবেদনে হাই কোর্টের এই রায় আসে। রায়কে ‘শিরোধার্য’ বলে নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা রায়ের অনুলিপি দেখে ‘দ্রুত’ ব্যবস্থা নেবে।

তবে জামায়াতকে দেশের ‘প্রধান’ ইসলামী দল দাবি করে রফিকুল রায়ের দিন এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশের পরিবর্তিত সংবিধানেও ‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ও রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ বহাল আছে। এমতাবস্থায় ধর্মীয় দল হিসাবে জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করার প্রশ্নই উঠে না।”

তিনি দাবি করেন, এই রায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতের অংশ নেয়া ‘বন্ধ’ করতে সরকারি ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ।

এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও রফিকুলকে তলব করে। একাধিকবার হাজির হতে বলার পরও আদালতে গিয়ে ব্যাখ্যা না দেয়ায় রফিকুল ইসলাম খানকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

অবশ্য ‘পলাতক’ থাকায় তাকে ওই সাজা এখনো ভোগ করতে হয়নি।