চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ বা তাদের পুনর্বাসন হচ্ছে না।
Published : 12 Jun 2013, 04:25 AM
চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধে প্রতিবছর সভা করে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেগুলোর বাস্তবায়নে অগ্রগতি কম।
কর্মকর্তারা বলছেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পাহাড় মালিকদের উদাসীনতার কারণেও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া ও পুনর্বাসনে সফলতা আসছে না।
চট্টগ্রামের পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী শরীফ চৌহান বলেন, “প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়। তারা বিভিন্ন সুপারিশও করেন। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে নানা তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই সংশ্লিষ্টদের আর কোনো খবর থাকে না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিটির সুপাশিগুলো বাস্তবায়ন এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গঠিত কমিটির নিয়মিত সভা হলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা রোধ করা যেত।
এজন্য তিনি চট্টগ্রামের প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত সভা এবং নগরীর সরকারি পাহাড়গুলোতে অবৈধভাবে দখলে রাখা প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের উপরও জোর দেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসাবে নগরীর ১২টি পাহাড়ে একহাজারের মতো পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এছাড়া পাহাড়গুলোর ঢালে বা আশেপাশে বসবাস করছে আরো ৫০ হাজারের মতো মানুষ।
এসব পাহাড়ের অধিকাংশেরই মালিক রেলওয়ে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও গণপূর্ত বিভাগ।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জন মারা যায়। এরপর প্রতি বছরই নগরীতে পাহাড় ও দেয়াল ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ গত বছরের ১৭ জুন নগরীর আকবর শাহসহ তিনটি এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় ২০জন। এর আগে ২০১১ সালের ১ জুলাই নগরীর টাইগারপাস এলাকার বাটালি হিলের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে ১২ জন মারা যান।
২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসের পর সরকারের পক্ষ থেকে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়ে।
ওই কমিটির পক্ষ থেকে পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ এবং তা প্রতিরোধে পুনর্বাসনসহ ৩৬টি সুপারিশ করা হলেও এর অধিকাংশই এখনো আছে কাগজে-কলমে।
এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে মাত্র দশটি। কমিটির নবম সভা হয় ২০১২ সালের ২ জুলাই। এর প্রায় একবছর পর গত ৬ জুন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির পরবর্তী সভা হয়।
গত বছরের সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা সব বসবাসকারীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ এক সপ্তাহের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি ছিল কম। এ বছরের সভায়ও নতুন করে সেই বিষয়গুলোই উঠেছে।
এছাড়া গত ছয় বছরে কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব পদেও পরিবর্তন এসেছে কয়েক দফা।
শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম হুমায়ুন কবির বলেন, “পদাধিকার বলে আমরা এসব কাজ করি। যার কারণে সবসময় লেগে থাকা সম্ভব হয় না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছেন, তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং তাদের মধ্যে কিছু পরিবারকে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য আমরা কাজ করছি।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ দেড়শ পরিবারকে সরিয়ে টাইগারপাস এলাকায় অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়া কিছু পরিবারকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনেরও চেষ্টা চলছে।
এসব উদ্যোগের পরও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য না আসার জন্য সরকারি পাহাড় অবৈধভাবে দখল করে রাখা প্রভাবশালীদের দায়ী করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা পাহাড়ে তাদের অবৈধ মালিকানা ধরে রাখতে কম টাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে ভাড়াটিয়াদের জিম্মি করে রাখে।
এজন্য অবৈধ দখলদারদেরও নিয়মিত উচ্ছেদ ও নজরদারিতে রাখার ওপর দেন তিনি।