সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় ১৪৯ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছেন উদ্ধার অভিযানে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
Published : 01 May 2013, 09:52 AM
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল হাসান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা তালিকা অনুযায়ী তিনি নিখোঁজদের এ সংখ্যা জানালেও কীভাবে এ হিসেব করা হল তা জানাননি।
আগের দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ধসেপড়া ভবনে কতজন শ্রমিক কাজ করছিল তার তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে কারখানাগুলোতে ৩ হাজার ২০০ লোক কাজ করতেন বলে তারা শুনেছেন।
ভবন ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সাড়ে ৩ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করছিলেন। তবে ধসের সময় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন বলে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা জানা গেছে।
নিখোঁজের যে তালিকা পুলিশ করেছে, তাতে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩শ’র মতো। এই তালিকা লাশ রাখার স্থান অধরচন্দ্র বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঝোলানো ছিল।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের অষ্টম দিনেও ধসেপড়া ভবনের নয়তলার ছাদও পুরোপুরি সরানো হয়নি। তৃতীয় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত গার্মেন্ট কারখানাগুলোয় ছাদের নিচে শ্রমিকদের লাশ চাপা পড়ে আছে বলে স্বজনরা দাবি করছেন। ভবনের সিড়ির অংশেও পৌঁছানো যায়নি, যেখানে অসংখ্য লাশ থাকতে পারে বলে উদ্ধার কর্মীরা ধারণা করছেন।
নিখোঁজের সংখ্যা ধারণা চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণ হিসেবে মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, “দেখা যাচ্ছে নিখোঁজ একজনের নামই বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ তালিকায় কয়েকবার লিপিবদ্ধ হচ্ছে। এই কারণে প্রকৃত নিখোঁজ সংখ্যার তুলনায় তালিকার সংখ্যা পাঁচ-ছয়গুন বেড়ে গেছে।”
বুধবারও ছবি নিয়ে এখনও ধ্বংসস্তূপের সামনে জড়ো হয়ে আছেন শত শত মানুষ, স্বজনের লাশের জন্য অপেক্ষা তাদের।
ধসেপড়া রানা প্লাজার নয়তলা ভবনের ছয়টি তলায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। উদ্ধার পাওয়া শ্রমিকদের দাবি, ধসের দিন হরতাল থাকলেও মাসের শেষ দিকে হওয়ায় বেতন নিয়ে ঝামেলা হতে পারে এই আশঙ্কায় প্রায় সব শ্রমিকই কাজে এসেছিলেন।
ওই পাঁচটি কারখানায় মোট কতজন শ্রমিক ছিলেন তার তালিকা বিজিএমইএর কাছে চাওয়া হয়েছে জানিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক সোহরাওয়ার্দী বলেন, “তালিকা হাতে পেলে বুঝতে পারব আসলে কত জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল হাসান জানান, এ পর্যন্ত (বুধবার সকাল) জীবিত-মৃত মিলে ২৮৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তার মধ্যে বুধবার সকালে পাওয়া ছয়টি মৃতদেহসহ মোট মৃতদেহ ৩৯৭টি। তিনি আগের দিনই বলেছিলেন, হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তির পর মৃত্যুর হিসেব এ তালিকায় নেই।
বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মে দিবসের আলোচনা সভা ও দু'দিনব্যাপী মে দিবস মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, রানা প্লাজায় পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানায় তিন হাজার ১২২ জন শ্রমিক ছিলেন। বুধবার পর্যন্ত দুই হাজার ৮৫২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে ৪০৮ জন মৃত।
ভবনের ভেতরে জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই জানান সারওয়ার্দী। তবে মৃতদেহগুলো যাতে অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয় সেই কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি নিখোঁজদের স্বজনদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান।
রোববার রাতে উদ্ধার অভিযানে যোগ হয় ভারী সরঞ্জাম। রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষ বংশী নদীতে ফেলা হচ্ছে। সে সব গাড়ির পেছন পেছন অনেককেই ছুটতে দেখা যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল হাসান বলেন, “কিছু মানুষ ও নিখোঁজদের স্বজনরা গাড়িগুলো থামিয়ে লাশ পাচার হচ্ছে কিনা তা দেখছে। এতে আমাদের কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। আমরা পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।”
তিনি জানান, আহতদের অনেককেই সিএমএইচ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানে ভিড় করছেন স্বজনরা। চিকিৎসা কাজে বিঘ্ন ঘটার আশংকায় সবাইকে হাসপাতালের ভতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের জন্য হাসপাতালের মূল ফটকে ডিজিটাল স্ক্রিন টানানো হয়েছে। সেখান থেকে হাসপাতারের ভেতরের অবস্থা সরাসরি দেখানো হচ্ছে।