আবদুল হামিদই রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল।

সুমন মাহবুব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2013, 00:26 AM
Updated : 21 April 2013, 09:02 PM

সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি কার্যত এই মনোনয়নের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হয়ে গেছে। 

৬৯ বছর বয়সী আবদুল হামিদ সাতবার কিশোরগঞ্জ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা। 

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রাধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের রূদ্ধদ্বার বৈঠকে তার মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

বৈঠক উপস্থিত একাধিক সাংসদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

বৈঠক শেষে সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের জানান, সংসদীয় দলের বৈঠকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ আবদুল হামিদকে দলের প্রার্থী ‘নির্বাচিত’ করা হয়েছে।

এর পরপরই সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে হুইপ সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, আব্দুল মতিন খসরু ও ফজলে রাব্বী মিয়া নির্বাচন কমিশনে যান। তারা আব্দুল হামিদের নামে চারটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও চিফ হুইপ আব্দুস শহীদকে নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় কুশল বিনিময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্রে সই করেন আব্দুল হামিদ।

পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের হাতে আবদুল হামিদের নামে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দেন। 

এর মধ্যে একটিতে প্রস্তাবক হিসাবে সৈয়দ আশরাফ ও সমর্থনকারী হিসাবে তোফায়েল আহমেদের নাম রয়েছে। 

এছাড়া আবদুস শহীদ ও আ স ম ফিরোজ প্রস্তাবক হয়ে বাকি দুটি মনোনয়ন পত্র জমা দেন, যাতে সমর্থনকারী হিসাবে আবদুল মতিন খসরু ও সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নাম রয়েছে।   

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত ৯ এপ্রিল এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

সে অনুযায়ী ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা রোববার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।

সোমবার মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২৪ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়।

রোববার অন্য কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করলে বিকালেই আব্দুল হামিদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাবে।   

আর একাধিক প্রার্থী থাকলে ২৯ এপ্রিল বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংসদে ভোট হবে। নির্বাচন শেষে সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকেই নির্বাচিত  ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। 

৩৪৯ জন সংসদ সদস্য এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, যাদের মধ্যে ২৭২ জনই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদে এসেছেন।

নির্বাচনী কর্মকর্তা নতুন রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা নেবে ইসি সচিবালয়। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠন করাবেন প্রধান বিচারপতি।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। নির্বাচিত হলে আবদুল হামিদ হবেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সাল, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৬১ সালে কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তিনি যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। এক পর্যায়ে তাকে কারাগারেও যেতে হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। 

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের  ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর  ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।

আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে গত ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ।

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হামিদ তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।