তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন রায় প্রদানকারী বিচারপতিরা।
Published : 16 Sep 2012, 04:14 PM
রোববার দফায় দফায় বৈঠক করে রাত ১০টার দিকে তারা রায়ে সই করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম সামসুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাক্ষর করেন খায়রুল হক।
ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে গত বছর ওই রায় দেয়ার সময় প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন খায়রুল হক। রায় প্রদানকারী বাকি ছয় বিচারপতির মধ্যে তিনজন তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ। তবে এর আওতায় আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেয়া হয়।
আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির ওই রায়কে ভিত্তি ধরেই সংবিধান সংশোধন করে মহাজোট সরকার, যাতে বিলুপ্ত হয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
ওই সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলে, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে।
রায়ে স্বাক্ষরের আগে বর্তমান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, রায় ঘোষণাকালের প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো. ইমান আলী বৈঠকে অংশ নেন।
বাংলা ও ইংরেজিতে মিলিয়ে এ রায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রায় বাংলা ও ইংরেজিতে মিলিয়ে লেখা হলো।
বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের লেখা রায়ের ৩৪২ পৃষ্ঠার মূল অংশটি তিনি বাংলায় লিখেছেন। তার সঙ্গে একমত হয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
এই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।
তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি একশ ৫০ পৃষ্ঠার অভিমত লিখেছেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর উদ্যোগ নেয়া হয়, যা গত বছর পাস হয়।
সংবিধানের এই সংশোধনের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। তারা বলছে, সরকার রায়ের একটি অংশ ধরে সংবিধান সংশোধন করলেও অন্য অংশটি উপেক্ষা করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপের ফলে আগামী নির্বাচন নির্বাচিত অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে বিএনপিসহ বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে।
দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর্রর্ অন্তবতীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে অনীহা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি।
২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ।
তাদের আবেদনের উপর শুনানি শেষ করেই আলোচিত এই রায়টি দেওয়া হয়।