দুর্নীতির দায়ে নাছিরের ১৩, ছেলের ৩ বছর জেল

দুর্নীতির দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর মো. নাছিরউদ্দিনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2007, 02:29 AM
Updated : 19 Nov 2019, 11:33 AM

বাবার কাজে সহযোগিতা করার অপরাধে ছেলে মীর মো. হেলালউদ্দিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের জেল দেওয়া হয়েছে।

অপরাধীদের আটকের দিন থেকে এ সাজা কার্যকর হবে বলে জানায় আদালত।

বুধবার দুপুর দুইটা ৭ মিনিটে সংসদ ভবনের বিশেষ জজ আদালত--২ এর বিচারক অমর কুমার রায় এ সাজা ঘোষণা করেন। এছাড়া অবৈধভাবে অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

মীর নাছির ৩ ফেব্র"য়ারি গভীর রাতে যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। ওই রাতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ জন শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়।

বিচারক তার রায়ে বলেন, মীর মো. নাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত সম্পত্তির হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অপরাধে তাকে ৩ বছর এবং অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জনের অপরাধে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। একই সঙ্গে বাবার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনে সহায়তা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মীর মো. হেলালউদ্দিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।

বিচারক তার রায়ে আরও বলেন, "অপারাধীদের অবৈধভাবে অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছি।"

রায় ঘোষণার আগে বিচারক বলেন, "১৮৬ পৃষ্টার রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ আমি পড়ে শুনাচ্ছি।"

বিচারক সাত মিনিটে তার রায় ঘোষণা করেন। এর আগে ১টা ৫০ মিনিটে মীর নাছির ও তার ছেলেকে কাঠগড়ায় আনা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়।

রায় ঘোষণার পর মীর নাছিরের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বলবে মামলায় কিছু তথ্যগত বিভ্রাট ছিল। টাকার কিছু অঙ্ক সঠিকভাবে নিরপিত হলে আদালতের রায় ভিন্ন হতে পারতো।

তিনি বলেন, রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম বলেন, রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। আগামীতে অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও এ ধরনের রায় হবে।

গত ১৮ ফেব্র"য়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন দেশের ৫০ জন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও অন্যান্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করে ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাদের নিজের ও স্ত্রী--সন্তানদের নামে থাকা স্থাবর--অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে বলে। ওই তালিকায় মীর নাছিরের নামও ছিল।

২২ ফেব্র"য়ারি বন্দী অবস্থায় প্রতিনিধির মাধ্যমে মীর নাছির নিজের ও সন্তানদের নামে থাকা ২২ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬শ' ৯৯ টাকার সম্পত্তির হিসাব বিবরণী কমিশনে জমা দেন।

৬ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ--পরিচালক শারমীন ফেরদৌসী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে কমিশনে দেওয়া হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপন ও জানা আয়ের বাইরে ২৫ কোটি ৭২ লাখ ২৮ হাজার ৬শ' ৩৭ টাকার সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের উপ--পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ আসামীদের দেওয়া সম্পত্তির বিবরণীতে ৩ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ৬শ ৩৭ টাকা সম্পত্তির তথ্য গোপনসহ ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯শ' ৯৭ টাকার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ এনে মহানগর হাকিম জগন্নাথ দাস খোকনের আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে ভুল করে আসামীদের কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টে টাকার স্থিতি বেশি করে দেখনোর বিষয়টি আদালতে প্রকাশ পাওয়ার পর সংশোধিত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সেখানে ২৭ কোটি ৯৪ লাখ ৯১ হাজার ৫শ' ৬ টাকার সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ৬ মে মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হলে ১৫ মে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৯ জন এবং অভিযোগপত্রের বাইরে আরও ১৩ জনসহ মোট ৩২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০ মে থেকে মামলার সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হয়। শেষ হয় ১৮ জুন।

২৮ জুন রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষের টানা চারদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেন।

২০ জুন আদালতের কাছে ৩৪২ ধারায় দেওয়া লিখিত জবানবন্দীতে মীর নাছির নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেছিলেন, "আমার ৫৬ বছর বয়সে থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও হয়নি। জুডিশিয়াল অফিসার থেকে শুরু করে আইনজীবী, রাষ্ট্রদূত, মেয়র এবং মন্ত্রী হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই আজ আমাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।"

দুর্নীতির অপরাধে গত ২১ জুন সংসদ ভবনের একটি আদালত বিএনপি নেতা ও সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল