বলা হচ্ছিল, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ জনপদের যোগাযোগের চিত্র পাল্টে যাবে, সেই সুফল এবারের ঈদযাত্রায় পেতে শুরু করেছে মানুষ; কিন্তু উত্তরের পথ এবারও ভুগিয়েছে ঈদ করতে গ্রামে ছোটা নগরের মানুষকে।
Published : 09 Jul 2022, 01:35 AM
আর মানুষের ভরসার বাহন রেলের সূচি এবারও এলোমেলো হয়ে গেছে যাত্রীর চাপে। সড়কের মত রেলপথেও দুর্ভোগ বেশি হয়েছে উত্তরের যাত্রীদের। উপচেপড়া ভিড় ঠেকেছে ট্রেনের ছাদেও।
ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিন শুক্রবার ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে যেতে যানজট ছাড়াও সঙ্গী ছিল যানবাহন না পাওয়ার ভোগান্তি। কেউ কেউ পশুবাহী ট্রাকের ‘ফিরতি ট্রিপে’ গরু-ছাগলের বিষ্ঠার ওপর গাদাগাদি করে গেছেন।
চট্টগ্রাম ও সিলেটের পথে তেমন ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এবার মাওয়া-শিমুলিয়ায় নদী পারাপারে পুরনো ঝামেলা নেই। তবে সেতুর পথে মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে ৪ কিলোমিটার যানবাহনের লাইন দেখা গেছে শুক্রবার দুপুরে।
ঢাকা থেকে দক্ষিণে যাওয়ার আরেক ফেরি পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় সকালের দিকে লম্বা লাইনে ফেরি পেতে দেরি হলেও দিনের পরের ভাগে পরিস্থিতি বদলেছে। তবে ঢাকা থেকে পাটুরিয়া পৌঁছাতে সময় লেগে যাওয়ায় ভোগান্তি কিছুটা থেকেই গেছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের কাউন্টারগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। আর তাতে অন্যবারের তুলনায় লঞ্চযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সদরঘাটের যাত্রীরা।
মহামারীর দুই বছর নানা বিধিনিষেধে অনেকে ঈদ করতে গ্রামে যেতে পারেননি। এবার রোজার ঈদে এসে সেই চিত্র বদলায়। গত মে মাসে রোজার ঈদের আগে লম্বা ছুটি মিলে যাওয়ায় ঈদযাত্রাও ছিল স্বস্তিদায়ক।
কিন্তু কোরবানি ঈদে এসে ছুটি গেছে কমে। ঈদযাত্রার মূল চাপ শুরু হয় বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের দুপুরের পর। তখন থেকেই ঢাকার টার্মিনালগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করে। ছুটি হওয়ায় সাভার ও গাজীপুর এলাকার পোশাকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছুটতে শুরু করেন গ্রামের পথে।
তাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, সফিপুর ও কালিয়াকৈরের এলাকায় থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়। অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের ধীরগতি থাকায় ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার সকাল থেকে তেমন ভিড় না থাকলেও বিকালের দিকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় কিছুটা বাড়ে। নবীনগর-বাইপাইল ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহনগুলো চলেছে ধীরগতিতে। বিকালে সিরাজগঞ্জে নলকা সেতুতে একটি গাড়ি বিকল হয়ে যানজট গড়ায় হাটিকুমরুল পর্যন্ত।
অবশ্য ঢাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। বাসা থেকে বেরিয়ে স্টেশন কিংবা টার্মিনালের পথে গণপরিবহন মিলছিল না। বেশি ভাড়ায় অটোরিকশা বা বাইক মিললেও অনেক চালকের গড়িমসি যাত্রীদের ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এরপর কল্যাণপুর ও গাবতলী টার্মিনালে পৌঁছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর হুড়োহুড়ি ঠেলে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে ঘরমুখী যাত্রীদের।
এবার কল্যাণপুরে ঘরমুখো মানুষের যে ভিড় হয়েছে, সেই দৃশ্য আগে চোখে পড়েনি শ্যামলী এনআরের কাউন্টার ম্যানেজার মুকুলের।
তিনি বলেন, “সকালের পরিস্থিতি চিন্তাই করা যায় না। খালি মানুষ আর মানুষ। মনে হয় যেন গণজমায়েত হয়েছে। গত কয়েকবছর ধরে গাবতলী-কল্যাণপুর এলাকায় এত যাত্রী দেখা যায়নি।”
ঈদ উপলক্ষে বাসের আগাম টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এরপরও যাত্রীরা কল্যাণপুর ও গাবতলীর কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছেন। শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগেই ওই এলাকায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় হয়।
অধিকাংশ পরিবহন কোম্পানির ভাষ্য, সব টিকেট আগে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক কোনো টিকেট বিক্রি করার অবস্থা তাদের ছিল না।
তাহলে এত যাত্রী কীভাবে গন্তব্যে উদ্দেশে যাত্রা করতে পারল? শ্যামলী কাউন্টারের ম্যানেজার মুকুল বলেন, “প্রতিষ্ঠিত বাস কোম্পানিগুলো অগ্রিম টিকেট বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা এখানে বসে আছি সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
“সকালে বেশ কিছু দ্বিতল বাস ও অনিয়মিত রুটের গাড়ি কল্যাণপুর হয়ে গাবতলীর দিকে গেছে। তারা টেনে টেনে যাত্রী তুলে নিয়েছে।”
বেশ কিছু কাউন্টারে দেখা গেছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে তাৎক্ষণিক টিকেট বিক্রি করতে। এক যাত্রী বলেন, “সকালে এসে আমরা ১৫ জন মিলে এসআই ট্রাভেলসে টিকেট কেটেছি। দাম যাই হোক, আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ গাড়ির সংকটের মধ্যেও তারা একটা গাড়ি জোগাড় করেছে। আমাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকার ভাড়া ১০০০ হাজার টাকা নিয়েছে।”
চাঁপাইনবাবাগঞ্জের উদ্দেশে সকাল সাড়ে ৯টায় যে গাড়ি ছাড়ার কথা, সেটা ১১টায়ও ছাড়তে পারেনি কেটিসি হানিফ। কারণ যে গাড়িটি যাবে সেটা ঢাকায় আসার পথে গাবতলী মাজার রোড এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে আছে বলে জানালেন কাউন্টারকর্মী সাব্বির।
“যাত্রা করার পথেও জ্যাম আছে। এখান থেকে আমিন বাজার, সভার এলাকায় জ্যাম। ঢাকা থেকে গাড়ি বের হওয়ার সময়ও কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়ে যাচ্ছে”, বলেন সাব্বির।
শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক নাসের বলেন, “সকালের দিকে মহসড়কের যানজট কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে। আমিন বাজারে যে জ্যাম শুরু হয়েছে তার লেজ চলে এসেছে কল্যাণপুর।
“সাভার, জাহারঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও নতুন করে জ্যাম লেগে যাচ্ছে বলো শোনা যাচ্ছে।”
সিরাজগঞ্জে এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মালবাহী ট্রাক, খোলা ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে গাদাগাদি করে মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। এ কারণে মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়। অধিকাংশ সময় ধীরগতিতে চলছে যানবাহনগুলো।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি লুৎফর রহমান জানান, শুক্রবার বিকালে নলকা সেতু এলাকায় একটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহনগুলো আটকে গিয়েছিল। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজট ও ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে।
ওসি জানান, সেতু দিয়ে ট্রাক, পিকআপভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের জেলার বাড়িমুখো যাত্রীরা বহু বছরের ভোগান্তি এড়াতে এবং প্রথমবার সেতুতে ওঠার বাসনায় এবার ঈদযাত্রায় বিপুল সংখ্যক মানুষ বেছে নেন সড়কপথ। এ কারণে পিরোজপুর, পটুয়াখালীসহ অন্যান্য এলাকার সঙ্গে বরিশাল ও খুলনাগামীদের ভিড় বাড়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে।
এ টার্মিনাল থেকে পিরোজপুর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী যাতায়াত করা সাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে কোনো টিকেট নেই বলে ব্যবস্থাপকরা জানালেন। খুলনা ও বাগেরহাট রুটের ইমা পরিবহনের কাউন্টারেও 'গাড়ি নাই' লেখা কাগজ সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
সায়েদাবাদে সেবা গ্রিন লাইন, সাদিক পরিবহন, বেপারি পরিবহন, কুয়াকাটা এক্সপ্রেস, বরিশাল এক্সপ্রেস, ফালগুনি এক্সপ্রেস, রাজীব পরিবহনের কাউন্টারেও কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি।
টার্মিনালের কর্মীরা জানালেন, এসব পরিবহনের বাসের টিকেট আগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাউন্টারে কেউ নেই। তবে চাপ বেশি দেখে কিছু কিছু বাস কাউন্টারে টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে বাইরে ‘বেশি দামে’ টিকেট বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করলেন যাত্রীদের কেউ কেউ।
খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বনফুল পরিবহনের কাউন্টারে কিছু টিকেট বিক্রি করার পর বাসের দরজায় ওই বাসের সুপারভাইজারকে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাসে সিটের জন্য এক হাজার এবং দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য ৭০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
কাউন্টারের বদলে গাড়িতে বেশি দামে টিকেট বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বনফুল পরিবহনের সুপারভাইজার ফয়েজ আহমেদ বললেন, “এত বেশি যাত্রী আগে দেখিনি, লোকজন টাকা দিলেও আমাদের পক্ষে তাদের সবাইকে নেওয়া তো সম্ভব না। কিছু বেশি নেওয়া হচ্ছে কারণ গাড়িটা যাত্রী নামিয়ে একেবারে খালি অবস্থায় আবার ফিরবে।”
তবু মহাসড়কে মোটরসাইকেল
ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মোটসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ঈদের সাতদিন মগহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি এ এলাকায়।
ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় যাওয়ার জন্য যাত্রী আকলিমা ও তার স্বামী সোবাহান মিয়া এক মোটরসাইলের চালকের সঙ্গে ১১ শ টাকা ভাড়ায় চুক্তি করছিলেন। কিন্তু চালক চাইছিলেন ১৩ শ টাকা। এ সময় কোনো পুলিশ সদস্যকে মোটরসাইকেল চালককে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে পুলিশ বক্সে দয়িত্বে থাকা পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. সাইফুল বলেন, “আমরা কতদিক সামলাব। অনেকেই অন্য গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে পড়ে। তাদের আটকানো সম্ভব হয় না।”
পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়া দক্ষিণবঙ্গগামী শতাধিক মোটরসাইকেল আরোহীকে নিয়ে শিমুলিয়া থেকে একটি ফেরি মাঝিরকান্দি গেছে শুক্রবার।
এই রুটে ফেরি বন্ধ থাকলেও ‘মানবিক কারণে’ ফেরি দিয়ে এসব মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিমুলিয়া ২ নম্বর ফেরিঘাট থেকে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মিডিয়াম ‘রো-রো ফেরি কুমিল্লা’ শরীয়তপুরের মাঝিরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তিনি বলেন, “বিশেষ বিবেচনায় মানবিক কারণে ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। তবে এরপর আরও ফেরি চলবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি।”
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা
ছুটি শুরুর প্রথম দিনই রেলের সূচি ভেঙে পড়ায় উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের কমলাপুর আর বিমানবন্দর স্টেশনে সময় কেটেছে অপেক্ষা আর ভোগান্তিতে।
শুক্রবার সকাল থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস; রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস; রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বনলতা এক্সপ্রেস; খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস; চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস এবং রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের চাইতে দুই থেকে আড়াইঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে হয়েছে।
পরিবার নিয়ে যারা আনন্দের ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার আশা নিয়ে সকালে কমলাপুর স্টেশনে এসেছিলেন, ভিড়ের মধ্যে প্রচণ্ড গরমে তাদের ভুগতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।
ঢাকায় কমলাপুর স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। কিন্তু পৌনে তিন ঘণ্টা দেরি করে বেলা ১১টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যায়।
ওই ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছেন সাজ্জাদ হোসেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঈদযাত্রায় ট্রেন সব সময় দেরি করে। কিন্তু তার পরও স্ত্রী-বাচ্চাদের নিয়ে সেই সকালে এসেছি ট্রেন ধরার জন্য। এসে দেখি ট্রেনই আসে নাই। এই গরমের মধ্যে কী যে কষ্ট হয়েছে, বলার মত না।”
ট্রেন দেরি করায় বিমানবন্দর স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদেরও ভোগান্তি চরমে।
সিলেটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাড়ার সময় বেলা সোয়া ১১টায়। ট্রেনটি পৌনে ১২টায় বিমানবন্দর স্টেশনে আসে। কিন্তু শুক্রবার দুপুর ২টায়ও সেখানে পৌঁছায়নি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যাত্রী ওয়াজেদুল ইসলাম তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্টেশনে বসে আছেন কয়েক ঘণ্টা ধরে। ওয়াজেদুল বলেন, “অগ্রিম টিকেট কেটেও কোনো লাভ হয়নি। স্টেশনে বসে আছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ট্রেনের অপেক্ষায় থেকে ছোট্ট মেয়েটা অস্থির হয়ে পড়েছে। এবার কেনো এমনটি হলো বুঝতে পারলাম না। ট্রেনের তো জট হওয়ার কথা নয়।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার কমলাপুর থেকে ৬৫টি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা।
“মূল সমস্যা হয়েছে ট্রেনে এত যাত্রী হচ্ছে যে উঠতে-নামতে যাত্রীদের সময় বেশি লাগছে। ফলে ঢাকা থেকে নির্ধারিত গন্তব্যে ট্রেনগুলো যেতে সময় লাগছে বেশি। ফলে ট্রেনগুলো গিয়ে ফেরত আসতে সময় লাগছে।
“এটাই ট্রেনগুলো দেরি হওয়ার কারণ। উত্তরের ট্রেনগুলো দেরি করেছে, চট্টগ্রাম-সিলেটের ট্রেনগুলো মোটামুটি ঠিক সময়েই ছেড়েছে।”
লঞ্চযাত্রায় স্বস্তি
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরও ঈদযাত্রায় লঞ্চ কিংবা যাত্রী- কোনোটারই সংকট দেখা যায়নি সদরঘাটে। শুক্রবার সকাল থেকেই সেখানে যাত্রীদের উপস্থিতি বেড়ে যায়।
মিরপুর-১ নম্বর থেকে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বিকালে সদরঘাটে হাজির হন রাকিবুল হাসান, যাবেন চাঁদপুরে। এসেই সোনারতরী লঞ্চে ওঠেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলছিলেন, “আসতে কষ্ট হয়েছে। তবে এসি চেয়ার পেয়েছি আর কষ্ট নেই।”
সড়ক ও রেলপথের যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাস না পেয়ে অনেকে টার্মিনালে কষ্ট করছে বলে জানতে পেয়েছি আর রেলেও...।”
সেই তুলনায় লঞ্চের যাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “লঞ্চ আছে ঘাটে, আর যাত্রীও আছে।”
বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক পিএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রুটিন অনুযায়ী সব লঞ্চই ছেড়ে যাচ্ছে। তবে শুক্রবার রুটিন ছাড়াও যাত্রীর উপস্থিতি থাকায় কয়েকটি রুটে স্পেশাল লঞ্চ ছেড়ে যায়।
ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শহিদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। বেশি যাত্রী হলেও লঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
“সিডিউল অনুযায়ী রাতে ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রী হয়ে গেলে ছেড়ে দিতে হবে। এখানে কোনো আপস নেই।”
সদরঘাট থেকে বেতুয়া, হাতিয়া ও ভোলা রুটের লঞ্চে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী কিছুটা কমেছে; তার পরও অনেক যাত্রী আছে।“
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি ও ঢাকার প্রতিবেদকরা)