হাওর থেকে ফেরা শিক্ষার্থীদের বয়ানে বিভীষিকার তিন দিন

বান ডাকা নদীতে তীব্র স্রোত, মুষলধারে বৃষ্টি আর কিছুক্ষণ পরপর বজ্রপাতের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে চলা লঞ্চটি হঠাৎ সুরমার চরে ধাক্কা খেয়ে কাত হয়ে যায়; বিভীষিকাময় সেই রাতে লঞ্চের যাত্রীদের মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি আর ‘বেঁচে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না’।

রাসেল সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2022, 02:44 PM
Updated : 23 June 2022, 03:43 AM

ওই লঞ্চে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, যারা সুনামগঞ্জের হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যার মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। কর্তৃপক্ষের সহায়তায় উদ্ধার করে ওই লঞ্চে করে তাদের সিলেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বিরূপ প্রকৃতি তাদের আবারও মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেখান থেকে ঢাকায় ফেরা শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গভীর রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চে আটকে থাকার সময়টায় তাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। কয়েকজন নিজেদের মধ্যে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন। অনেকে আবার সান্ত্বনা দিয়ে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছেন বন্ধুকে।

সুনামগঞ্জে আটকা পড়া থেকে শুরু করে তিন দিনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তারা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

দুই দিনের সফরে গত ১৪ জুন রাতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ২১ শিক্ষার্থীর ওই দলটি। সেই দলে ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ২০ জন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন।

১৫ জুন টাঙ্গুয়ার হাওর ও নীলাদ্রি লেক ঘুরে নৌকাতেই তারা রাত কাটান। পরদিন বৃহস্পতিবার শিমুলবাগান ও বারিক্কা টিলা ঘুরে রাতে তাদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই শুরু হয় বিপত্তি।

ওই দলে থাকা শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, শিমুলবাগানের উদ্দেশে নৌকায় যাত্রা শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়।

“একদিকে মুষলধারে বৃষ্টি, অপর দিকে তীব্র স্রোতে আমাদের নৌকা একেবারেই এগোতে পারছিল না। নৌকার ইঞ্জিনের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় উপায়ান্তর না দেখে বিশ্বম্ভরপুরে নেমে যাই। কিন্তু সেখানেও সব ডুবে একাকার।

“স্থানীয় কয়েকজন অটোরিকশার চালক পানি ঠেলেই আমাদের চারপোল নামে একটি জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রাজি হন। যাওয়ার পথে তিন দফায় নষ্ট হয় দুটো অটোরিকশা। তখন বিকাল প্রায় ৪টা। বৃষ্টি আর সড়কে পানির স্রোত ঠেলে সন্ধ্যার দিকে চারপোল পৌঁছাই আমরা।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিজান বলেন, রাস্তায় পানির স্রোত এত বেশি ছিল যে কয়েকটা মোটরসাইকেলকে নিমিষেই চাকলসহ পানিতে গড়িয়ে যেতে দেখেন তারা। অটো রিকশাগুলোকে ঠেলে ঠেলে তাদের চারপোলে পৌঁছাতে হয়।

চারপোল থেকে বালুবাহী নৌকা ভাড়া করে সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ শহরের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। কিন্তু নৌকায় উঠে আরেক বিপদে পড়তে হয়।

হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরমা নদীর চর থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোববার উদ্ধার করা হয়।ছবি: আইএসপিআর

শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ বলেন, ট্রলারে ওঠার আগ থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা যেন তীরের ফলার মত শরীরে বিঁধছিল। এর মধ্যে আবার ভয়াবহ রকমের বজ্রপাত হচ্ছিল।

“আমাদের দলের অনেকেই সাঁতার জানে না। উত্তাল হাওরে এমন ভয়ানক বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে অসহায় হয়ে আমরা গুটিসুটি মেরে ট্রলারে বসে রইলাম।

“কিন্তু ট্রলারের চালক দিক হারিয়ে ফেললেন। বহু পথ ঘুরে ঘণ্টাখানেকের পথ আমরা তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিই। রাত ১০টা নাগাদ পৌঁছাই সুনামগঞ্জ শহরে।”

সুনামগঞ্জে শহরে পৌঁছালে বিপদ কাটবে- এমন আশাই করছিলেন দলের সবাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলেন উল্টো চিত্র। উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে পুরো সুনামগঞ্জ শহর। নিচু অঞ্চলে ঘরবাড়ি ডোবার পাশপাশি শহরের বাড়িগুলোর এক তলা পর্যন্ত জলবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

শোয়াইব বলেন, “পুরো শহর বন্যার পানিতে থই থই। কোনো গাড়ি চলছে না। ঢাকায় ফেরার কোনো সুযোগই নেই। বাধ্য হয়ে বুকসমান পানি পেরিয়ে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘পানসী’ নামের একটি রেস্তোরাঁর দোতলায় আশ্রয় নিই। সেখানে আমাদের মত আরও প্রায় ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ততক্ষণে।

শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটের কথা তুলে ধরে উদ্ধারের আর্জি জানান।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ স্থানীয় প্রশাসনসহ সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের অনুরোধ জানান।

শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ‘পানসী’ রেস্তোরাঁ থেকে ওই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যান র‌্যাবের কয়েকজন সদস্য।

পরদিন শনিবার দুপুরে পুলিশ লাইনস থেকে কপোতাক্ষ অনির্বাণ ট্যুরিজম বোট নামে একটি লঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীরা রওনা হন সিলেটের দিকে।

ওই লঞ্চে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ১৭ জন, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ প্রায় একশ যাত্রী।

শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলেন, এবার হয়ত মুক্তি মিললো দুর্দশা থেকে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাটাই তখনও বাকি।

প্রবল স্রোতের মধ্যে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে কোনোভাবে বাকি একটি ইঞ্জিন দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল লঞ্চ। এর মধ্যে রাত ৮টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের কাছাকাছি পৌঁছে সুরমা নদীর ইউলুপে একটি ডুবো চরে ধাক্কা খেয়ে একদিকে কাত হয়ে সেখানে আটকে যায় লঞ্চটি।

হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরমা নদীর চর থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোববার উদ্ধার করা হয়। ছবি: আইএসপিআর

শোয়াইব বলেন, রাত হওয়ায় নাবিক কিছুই দেখতে পারছিলেন না। বৃষ্টি আর নদীর স্রোত এত বেশি ছিল যে ছোট্ট লঞ্চের ওপর নাবিকের তেমন নিয়ন্ত্রণও ছিল না।

“লঞ্চ ধাক্কা খাওয়ার পর আমি আসন থেকে নিচে পড়ে যাই। লঞ্চে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি আর কান্না। দোয়া পড়ছিলেন সবাই। আমরা জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।”

এরপর তারা সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি, স্রোত আর অন্ধকারে দিক হারানোর শঙ্কায় উদ্ধারকারী দলও সেখানে পৌঁছাতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে সেখানেই আটতে থাকতে হয় তাদের।

আটকা পড়াদের একজন ফারাহ জাহান শুচি বলেন, “নিজেদের মধ্যে শেষবারের মত ক্ষমাও চেয়েছি আমরা কয়েকজন। ওই দুর্বিষহ সময়ে বন্ধুদের অনেককে ভেঙে পড়তে দেখছি। পাশাপাশি আমাদেরকে সান্ত্বনা যোগানোর জন্য অনেক সাহসী বন্ধুকেও দেখেছি।

“পুরোটা সময়ের সেই বিভীষিকাকে আমরা একসাথে কাটিয়েছি। সাহায্য পাওয়ার জন্য আমাদের অনেকে যোগাযোগ করছিল। আমরা সবাই একত্রে না থাকলে ওই সময়টা কাটানো ছিল অসম্ভব।”

শুচি বলেন, বন্ধুদের মনোবল যোগানোর জন্য ওই দুর্যোগের মুহূর্তেও হাসি-ঠাট্টা করে মন ভালো করার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ।

“ছাতক পৌঁছানোর আগ-পর্যন্ত কীরকম শঙ্কায় যে আমরা রাতটা কাটিয়েছি, ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করেছি- তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে সবাই একসঙ্গে থাকায় কিছুটা সাহসও হচ্ছিল।”

তার ভাষ্য, “রাত দেড়টার দিকে যখন লঞ্চের সামনের অংশ একটু একটু করে পানির নিচে ডুবছিল, তখন কয়েকজন যাত্রী পানিতে নেমে বাঁধ থেকে লঞ্চটি সরানোর চেষ্টা করেন।

“এই সময় ছিল আরও ভয়ঙ্কর। ইঞ্জিন বিকল হলে লঞ্চটি সুরমার স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। এক পর্যায়ে লঞ্চটিকে চালু করতে সক্ষম হন চালক। জিপিএস চালু হয় মোবাইল ফোনে। ধীরে ধীরে আঁকাবাঁকা সুরমা নদীর পথ ধরে লঞ্চটিকে নেওয়া হয় ছাতকের দিকে।”

হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরমা নদীর চর থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোববার উদ্ধার করা হয়। ছবি: আইএসপিআর

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের উদ্ধার করতে গেলেও নদীতে প্রবল স্রোত, বৃষ্টি আর অন্ধকারে তাদের মাঝপথে ফিরে যেতে হয়। পরে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধারের আশ্বাস দেওয়া হয়।

রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ছাতকের কাছাকাছি একটি ফেরিঘাটে শিক্ষার্থীদের লঞ্চটি নোঙর করে। সেখান থেকে সেনা সদরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষার্থীদের ওই ঘাটেই অবস্থান করতে বলা হয়।

সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে সকালে সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঁচটি স্পিডবোট নিয়ে তাদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের নেওয়া হয় সিলেট বিমানবন্দরে।

মিজানুর রহমান বলেন, “বিমানবন্দরের যাওয়ার পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আমাদের দেখতে আসেন। পরে সেনাবাহিনীর বাসে করে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেওয়া হয়।”

বিপদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ।

ভ্রমণে গিয়ে বেঁচে ফেরার সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে লাম-ইয়া আক্তার প্রাপ্তি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “পানির অপর নাম যেমন জীবন, তেমনি মরণও- এই কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজন ছাড়া ভালো সাঁতার কেউ জানতাম না। আর সাঁতার জানলেও ওই স্রোতে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না ১৮ জুনের পর জীবনে যে কটা দিন পাব, মনে করব- তা আসলে বোনাস বেঁচে থাকা।

সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মৃত্যুর খুব কাছে আব্বু-আম্মুর মুখটা সামনে খুব ভাসছিল। তাদের কথা কানে আসছিল। তাদের খাওয়া ঘুম সব শেষ। শুধু দোয়া করে গেছে যে সন্তানটা বেঁচে ফিরতে পারে।”

মারিয়া হাসিবা বলেন, “আমার কাছে মনে হয়, এই ট্যুরটা আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। আমি অনেক কিছুই একদম কাছ থেকে দেখেছি। যেমন- মৃত্যু, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা। এত বিপদের ভেতরেও আমরা একসাথে ছিলাম, আমরা একজন আরেকজনের সহায় ছিলাম।

“জীবনের অনেক সুন্দর কিছু সময় কাটিয়েছি, আবার অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হয়েছি। সবসময়ই বেঁচে ফেরার চেষ্টা করেছি, কিন্তু যেখানে পরবর্তী এক মিনিটের নিশ্চয়তা ছিল না, যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে- এটা ভেবেও নিশ্চিন্ত থেকেছি। আমি জানি না এতটা মেন্টাল স্ট্যাবিলিটি আমি-আমরা অর্জন করেছি কীভাবে।”

 

সুনামগঞ্জে বন্যায় ভয়াবহ যে চিত্র শিক্ষার্থীরা দেখে এসেছেন সেজন্য ক্যাম্পাসে ফিরেই উদ্যোগ নিয়েছেন দুর্গতদের সহায়তার। ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে তারা বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

শোয়াইব আহমেদ বলেন, “আমরা দেখে এসেছি সুনামগঞ্জে কী ভয়াবহ অবস্থায় মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করছে। সেখানে মানুষদের হাকাকার দেখে মনে হয়েছে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে।”

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী যেদিন আমাদের নৌকায় করে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমরা দেখি আশে-পাশের বাড়িঘর থেকে মানুষ চিল্লায় চিল্লায় বলছ-‘খাবার, খাবার, খাবার দিয়ে যান’।

“তারা মনে করেছিল আর্মি তাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। মনে হয়েছিল, দুই-তিন ধরে তারা খাবার খেতে পায়নি। কারণ তাদের খাবারের সব পথ তো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”

বন্যার্তদের সেই আহাজারি তাদের নাড়া দিয়ে গেছে। এই ‘বোনাস জীবনে’ তারা এখন চান অন্যদের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে যেতে।

আরও খবর