এবার লঞ্চ নষ্ট: সুরমার চরে আটকা ঢাবির সেই শিক্ষার্থীরা

দুর্দশা যেন পিছু ছাড়ছে না হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থীদের; যারা এবার ফেরার পথে লঞ্চের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে সুরমা নদীর চরে আটকা পড়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2022, 08:19 PM
Updated : 19 June 2022, 04:27 AM

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ২১ জন শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৮০ জন যাত্রী সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে লঞ্চের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে সুরমার মাঝ নদীর চরে আটকা পড়েছেন।

নদীতে প্রবল স্রোত ও বৃষ্টিপাতে নিজেদের জীবনের শঙ্কার কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধারের আর্তি জানিয়েছেন।

শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর চরে আটকা পড়েন বলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ফোন করে জানান।

রাত দেড়টার দিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএসপিআরের ডিরেক্টর মেসেজে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে একটি টিম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় অর্ধেক পথ যাওয়ার পর ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ নদীতে প্রবল স্রোত, বৃষ্টিপাত ও অন্ধকারে গতিপথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ভোরে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করবে। উদ্ধারের জন্য ৪- ৫ টি স্পিডবোট রেডি করা আছে বলে জানিয়েছেন।“

এবিষয়ে সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টের স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, সুনামগঞ্জের এসপির সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মনসুর।

এদিন দুপুর দুইটার দিকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনস থেকে কপোতাক্ষ অনির্বাণ ট্যুরিজম বোট নামের একটি লঞ্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১, ফার্মেসি বিভাগের ১৭, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৮০ জন যাত্রী সিলেট শহরের দিকে রওনা দেন।

এর আগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে বৃহস্পতিবার শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন। সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকট তৈরি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ফোন করে সহায়তা চান শিক্ষার্থীরা।

সবশেষ এ শিক্ষার্থীরা আবার দুর্ঘটনার মুখে পড়লেন শনিবার।

লঞ্চের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে চরে আটকে পড়ার পর শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ রাত ১১টার দিকে ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চারদিকে খুব অন্ধকার, পানি আর পানি। নদীতে প্রচুর স্রোত, প্রচুর বৃষ্টিও হচ্ছে। এই রাতে সবাই জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।

জরুরি ভিত্তিতে সবাইকের উদ্ধার করার আহ্বান জানান তিনি।

জরুরি সেবায় ৯৯৯ এ ফোন করেও তারা এখন পর্যন্ত সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান শোয়াইব।

গত ১৪ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যান।

এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। পরে শহরের ‘পানসী’ রেস্তোরাঁয় তারা আশ্রয় নেন। সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকট রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ফোন করে জানান শিক্ষার্থীরা।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের অনুরোধ জানান।

পরে শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জ শহরের ‘পানসী’ রেস্তোরাঁ থেকে ওই শিক্ষার্থীদের জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে শনিবার দুপুরে রওনা হয়ে রাতে আবারও সুরমা নদীতে আটকে পড়েন।

আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারেক রহমান নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী শনিবার রাত ১২ টার দিকে ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “মাত্রই ফোনে নেট কানেকশন পেলাম। সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে আমাদের লঞ্চটা বাজেভাবে আটকে গেছে। যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গত তিনদিনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে আমরা এতটাই ট্রমাটাইজড যে মানসিকভাবে আমরা মারাত্মক বিপর্যস্ত।

“প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝে এই মুহূর্তে কোনো রেসকিউ টিম আসতেও পারতেছে না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন আর যে যেভাবে পারেন আমাদের সাহায্য করেন।“