শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ১১.৮% ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি: সমীক্ষা

রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যে ট্রাফিক পুলিশ সারা দিন যান চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্বটি পালন করছেন, শত কষ্টের পর আরও একভাবে তাকে খেসারত দিতে হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2022, 06:22 PM
Updated : 6 June 2022, 06:22 PM

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক সমীক্ষা বলছে, যানবাহনের শব্দ দূষণের কারণে ১১.৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তাদের মধ্যে ১৫.৫ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে কথা শুনতে অসুবিধা হয়, ১৯.১ শতাংশকে ঘরের অন্য সদস্যদের তুলনায় বেশি ভলিউম দিয়ে টিভি দেখতে হয়, উচ্চস্বরে কথা না বললে তাদের কথা শুনতে কষ্ট হয়, ৩৩.৯ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ উচ্চস্বরে কথা না বললে শুনতে পান না এবং ৮.২ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পর মাথা ঘোরা, বমি ভাব ও ক্লান্তির সমস্যায় ভোগেন।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাপার যৌথ উদ্যোগে ‘পরিবেশ দূষণনিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে এই সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন বাপার যুগ্মসম্পাদক ও ক্যাপস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

তিনি বলেন, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শব্দদূষণ ওই যানবাহন থেকে হয়। আর সড়কে নানা ধরনের দূষণের জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি অন্যতম কারণ।

“বর্তমানে ঢাকার এক তৃতীয়াংশ গাড়ি ফিটনেসবিহীন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরার জন্য কয় দিন পরপর মোবাইল কোর্ট টহল দিতে বের হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মোবাইল কোর্ট এলে কীভাবে যেন তারা তা  জেনে যায় এবং ওই দিন ওই এলাকায় আর আসে না।"

কামরুজ্জমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের একার পক্ষে কেবল শব্দ দূষণ নয়, কোনো দূষণই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দারও তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, শব্দ দূষণ রোধে জনগণের ‘সচেতন এবং নিয়ন্ত্রিত’ হওয়ার বিকল্প নেই।

“আমি গাড়ি চালাই, সারা দিনে আমার একটা হর্নও বাজাতে হয় না সাধারণত। কিন্তু আমার পেছনে যিনি আছেন, তিনি হর্ন দিয়েই যাচ্ছেন। অথচ হর্ন দিলে রিকশা সরে না। গাড়ি এক ইঞ্চিও আগায় না। তাহলে বলেন, কী এমন পদ্ধতি আছে যা দিয়ে তার এই হর্ন দেওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? কত টাকার প্রকল্প নিলে এটা সম্ভব?"

শব্দ দূষণের পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক।

তিনি বলেন, “আজ আমাদের সেন্টমার্টিন মরতে বসেছে। সমুদ্রে এখন শুধু প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক। মানুষ যদি নিজ থেকে একটু সচেতন না হয়, শুধু আমাদের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাছাড়া আমরা রেগুলেটরি কাজ করি, ডেভেলপমেন্ট আমরা করি না।"

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, "আমরা যদি ই-ওয়েস্টের কথা বলি, অল্প দামে জিনিস কিনে যে দেশ সয়লাব করে দিচ্ছেন, এগুলা কোথায় রাখবেন? সমুদ্রতলে কোকের প্লাস্টিক বোতল, ক্যান পাওয়া যায় এখন। এই ক্যান তো তাও একটা পর্যায়ের পরে ডেস্ট্রয় হতে পারে, কিন্তু প্লাস্টিক তো ১০০ বছরেও ডেস্ট্রয় হবে না।

“যে পরিমাণ প্লাস্টিক সাগরের নিচে জমা আছে, তা কয়েকশ বছরেও শেষ হবে না। আর এই প্লাস্টিক মানুষের দেহে এখন চেইন আকারে যাচ্ছে।"

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কেমিকেল ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে করলে এই ঘটনা ঘটত না। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে এতবড় ব্লাস্ট হত না। নিশ্চয় কিছু না কিছু ওখানে ছিল। সীতাকুণ্ডের মত জায়গায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক, এমন স্থাপনা কেন করলাম আমরা?”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান তরুণদের উদ্দেশে বলেন, "আমরা পরিবেশসম্মত ডিপো তৈরি করতে পারিনি, ব্যবহার করতে পারিনি। ওখানে গরিব মানুষ কাজ করেছে এবং তারা পুড়ে মরেছে। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য তোমাদের অংশগ্রহণ, বিপ্লব খুব জরুরি।

“পরিবেশ বিপর্যয়ের অবস্থা এমন জায়গায় গেছে, আপনি কোনটা নিয়ে কথা বলতে চান? সব দূষিত। আর দূষণ করছে বড়লোকেরা। ধনী দেশ, ধনী মানুষ দূষণ করছে। যত আইনই থাকুক, আইন তাদের জন্য ব্যবহার করা হয় না। কারণ তাদের কাছে অর্থ আর রাজনৈতিক শক্তি আছে।”

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে অনেক আইন দেশে আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।

“প্রথমে যে কাজটি হাতে নেওয়া দরকার, তা হল পলিথিন-প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার কঠোরভাবে দমন করা। এতে জনসচেতনতাও জোরদার করা প্রয়োজন।"

অন্যদের মধ্যে বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।