শিক্ষক নিয়োগে ‘পুল গঠনের’ প্রস্তাবে শিক্ষামন্ত্রীর সায়

বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) দেওয়া ‘নিয়োগ পুল’ গঠনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 02:14 PM
Updated : 18 Jan 2022, 02:14 PM

তিন দিনব্যাপী ‘জেলাপ্রশাসক সম্মেলন ২০২২’ এর প্রথম দিন মঙ্গলবার বিকালে ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ বিষয়ে জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি পুল গঠন করা এবং সেখানে জেলা প্রশাসকদের অন্তর্ভুক্ত করার একটি প্রস্তাব এসেছে।

“এটা করা যেতে পারে, ম্যানেজিং কমিটিগুলোর কাজে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে। তারপর মাধ্যমিক শিক্ষায় উপজেলায় কোনো কমিটি নেই, সেটি তারা সাজেস্ট করেছেন।”

জেলা প্রশাসকদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে দীপু মনি বলেন,“আমরা তো মনে করি এটা খুব ভালো, আমরা এটা করব।”

তিনি জানান, শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথায় কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সম্মেলনে তা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের দেওয়া কিছু প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত জানানো হয়েছে।

“একটা বিষয় ছিল যে, কারিগরি শিক্ষা যেন সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয়। সেটাতো আমরা এর মধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছি, সেটা তাদের জানালাম।”

‘যতখানি সম্ভব স্বাভাবিক রেখে কোভিড মোকাবেলা’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে জানিয়ে যতখানি সম্ভব সবকিছু স্বাভাবিক রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

দীপু মনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট করে আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে বলা আছে। এখন আমাদের প্রচেষ্টা হল, জীবন যতখানি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব সেটা রেখে আমরা করোনা মোকাবেলা করব।

“যদি এমন দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, আমরা ক্লাশ চালু রাখতে পারছি না, তাহলে আমাদের অনলাইনে যেতেই হবে।”

দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক বিধি-নিষেধের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত ১২ সেপ্টেম্বর আবার শ্রেণিকক্ষে ফেরে শিক্ষার্থীরা।

অনলাইন ক্লাস এবং অ্যাসাইমেন্ট চালু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেকের বাড়িতে অসুস্থতা আছে, কেউ নিজে অসুস্থ, সেক্ষেত্রে কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে। আমরা বিকল্প পদ্ধতিও চালু রাখছি ও রাখব।

“যেখানে এখনো ভার্চুয়ালি সম্ভব না সেখানে অ্যাসাইনমেন্ট দেব। গত ছয় মাসেও তো আমাদের কিছু ক্যাপাসিটি বেড়েছে, কিন্তু তারপরেও তো আমরা শতভাগের কাছে পৌঁছাতে পারব না।

সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। সেখানে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, “আমরা এখনও বন্ধের কথা ভাবছি না। এমন হারে ছড়িয়ে পড়ছে, এটা তো সব জায়গায়। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকলেও তো সংক্রমিত হবে।

কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ‘কিছু সংক্রমণের’ কথা উল্লেখ করে করে তিনি জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।   

“তাদের চিকিৎসা দিয়ে ‘আইসোলেট’ করে… তারা বাড়িতে চলে গেছে বা আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সংক্রমণ হার আমরা যেটা দেখি সেটা কতগুলো পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে কতজন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তো কমিউনিটি রেটটা সেভাবে পাচ্ছি না।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সতর্ক করে তিনি বলেন, “এখন অনেকেই মনে করছেন ওমিক্রন, এটা তো কোনো বিষয় না। এটাতে মৃত্যু ঝুঁকি নেই, কাজেই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজন নেই।

“আমাদের দেশে কিন্তু ওমিক্রনের চেয়ে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এটিতে মৃত্যুঝুঁকি আছে। কাজেই আমরা যেন স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলি।”

গত নভেম্বরে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশেও ৫৫ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য টিকা এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করেনি। যদি করে তাহলে আমরাও এটা নিয়ে ভাববো।

তিনি বলেন, “এখন এমন একটি জায়গায় যাচ্ছে যে মোটামুটি কমিউনিটিতে সব দিকেই এখন সংক্রমণ। কাজেই জীবনকে যতটুকু স্বাভাবিক রেখে করোনাকে মোকাবেলা করা যায়।”

এ বিষয়ে কোভিড- ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পরামর্শক কমিটির সাথে আগেও বসেছি। হয়তো আগামী দু একদিনের মধ্যে বসব।”

আরও পড়ুন