সময় এসেছে হিসাব মেলানোর: রাষ্ট্রপতি হামিদ

যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, অর্ধশতক পেরিয়ে এসে তার কতটুকু অর্জন হয়েছে, সেই হিসাব মেলানোর তাগিদ দিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2021, 01:15 PM
Updated : 16 Dec 2021, 03:42 PM

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের ৫০ বছরের মূল আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। এটা একটি  জাতির জন্য খুব কম সময় নয়।

“সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার হিসাব মেলানোর।”

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদারের আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধুই দেন স্বাধীনতার ডাক, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তা সফল পরিণতি পায় নয় মাস পর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্মযুদ্ধে জয়ের দিন।

এবার বাঙালির মহাবিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে নেওয়া হয়েছে দুই দিনের অনুষ্ঠানমালা। তাতে সঙ্গী হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে উঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।”

সকল ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।”

বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়া আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বই পড়ে বা অ্যাকাডেমিক চর্চা থেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জন করেননি। তিনি রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন গণমানুষের কাছ থেকে। তিনি জনগণের ভাষা বুঝতেন, তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনের কথা জানতেন এবং সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন।

“পৃথিবীতে তাদেরই স্টেটসম্যান বা রাষ্ট্রনায়ক বলা হয়, যাদের ভূমিকার কারণে ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি ও দিক বদলে যায়। রাষ্ট্র বা দেশের চরিত্র বদলে যায়। মানচিত্র বদলের পাশাপাশি শাসনকার্যেও আমূল পরিবর্তন ঘটে। এমকি রাষ্ট্রের কাঠামোও নতুনভাবে গড়ে  উঠে। 

“বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমনই একজন মহানায়ক, যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি শোষণ-নির্যাতনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। পেয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ ও একটি প্রজাতন্ত্র। স্বাধীন দেশ, প্রজাতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান প্রণয়ন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির রুপরেখার পরিকল্পনা, এ সকল কাজ একই সঙ্গে বিশ্বে আর কোনো মহানায়কই করতে পারেননি।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “ইতিহাস সেই গড়তে পারে, যে নিজে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারে এবং অন্যদের দেখাতে পারে। সাথে সাথে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে ও অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সাথে সাথে সমগ্র জাতিকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তাইতো সামগ্রিকতায় বঙ্গবন্ধু যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, তেমনি বিশ্ব ইতিহাসেও সেরা মহানায়ক।”

বিজয়ের সুবর্জয়ন্তীতে রাষ্ট্রপতির আশা, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবাই এগিয়ে আসবে।

“বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই।”

“জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব  মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।”