আদিবাসীদের নিয়ে ‘সুচিন্তিত উন্নয়নের’ পরামর্শ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের

আদিবাসী অধিকারকর্মীদের সভায় এসে ‘সুচিন্তিত উন্নয়নের’ কথা বললেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2021, 10:01 AM
Updated : 20 Oct 2021, 10:01 AM

তিনি বলেছেন, “আপনারা সবটাকে যেন ‘না’ না বলেন। কোনটাকে আপনারা ‘হ্যাঁ’ বলবেন তাও আপনাদের ঠিক করতে হবে। কোন জায়গাগুলোতে সঠিকভাবে সুচিন্তিতভাবে উন্নয়ন করা যায় তাতে আপনারা কীভাবে সমৃদ্ধ হবেন সেটাও ভাবতে হবে।”

আদিবাসীদের মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে বুধবার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের জাতীয় সম্মেলনে’  হয়। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় কাপেং ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সরকারের ‘ইকো পার্ক’ তৈরির পরিকল্পনাসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আবার বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হওয়ায় আবাস হারাচ্ছে আদিবাসীরা।

আদিবাসীদের সাতন্ত্র্য বজায় রেখেই কী করে তাদের পরিকল্পিত উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা যায়, সে প্রসঙ্গে নিজের বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন নাছিমা বেগম।

“আমরা বিদেশে গেলে তারা তাদের পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখাতে আমাদের নিয়ে যায়। তখন আমাদের আফসোস হয়, আমাদের বাংলাদেশের এত সৌন্দর্য আছে, সেটা আমরা তাদের দেখানোর জন্য আকর্ষণ করতে পারি না কেন।

“আমাদের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যে সৌন্দর্য আছে, তা যদি আমরা বিদেশি পর্যটকদের দেখাতে পারতাম। সেটার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসে আমাদের একটা পরিকল্পনা করা উচিৎ, যে কোন জায়গাতে কী করা দরকার। তাহলে কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের দেশের অনেক উন্নয়ন হবে। সেক্ষেত্রে আপনাদের পণ্য বিদেশিদের কাছে বিপণনের বড় সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের সংস্কৃতি বাইরে পরিচিতি পাবে।”

সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রক্প সমন্বয়ক হেলেন তালাং বলেন, “ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, মধুপুর বনাঞ্চল, গাজীপুর, পটুয়াখালী-বরগুনা সর্বত্রই ভূমি হারাচ্ছে আদিবাসীরা। হত্যা, নারী নির্যাতন, ভূমি দখল, অপমান ও লাঞ্ছনার কারণে আদিবাসীদের দেশান্তরের প্রবণতা বাড়ছে।”  

পরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমও বলেন, ভূমি সমস্যাই আদিবাসীদের জন্য এখন ‘সবচয়ে বড় সমস্যা’।

“ভূমি দখল যেটা আমরা দেখি… এটা সত্য, এটা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই। যে কারণে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ব্যবসা যারা করেন, তারা মুনাফা করার জন্যই করেন। একটা দেশ চলতে গেলে যেমন ব্যবসার প্রয়োজন। তেমনি মুনাফা করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদকে নষ্ট না করে কীভাবে ব্যবসা করা যায় সে বিষয়ে আমরা পথ দেখাতে পারি।”

আদিবাসী নিপীড়নের প্রসঙ্গে সরকারের অতিরিক্ত সচিব নাছিমা বেগম বলেন,  বলেন, “কখনোই এটা ভাববেন না যে বেছে বেছে আদিবাসী মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়। আপনারা ধর্ষণের যে ডেটা দিয়েছেন সারা বাংলাদেশের চিত্র তো এর চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ… আরও বেশি, তাই না? কোনো ধরনের যৌন নিপীড়ন আমরা চাই না। বিশেষ করে বালক শিশুদের ওপর যে যৌন সহিংসতা হয় সেটা ঠেকাতেও কমিশন তৎপর।”

নেদ্যারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আনা ফন লিউয়েন বলেন, তিন মাস আগে বাংলাদেশে এসে তিনি জানলেন, এখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ একই নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, ভাষা ও ধর্ম পালন করছে। তারা সবাই বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং তারা মুসলমান।

“তখনই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে বাকি ১০ শতাংশের কী খবর? সংখ্যালঘু হিসেবে, আদিবাসী হিসেবে আমরা মনে করি আপনাদের সমর্থন করার আমাদের কারণ রয়েছে। কারণ আমরা মনে করি, আপনাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার, আপনাদের শক্তিশালী করা দরকার।”

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেশে ৪১টি মাতৃভাষা পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বাংলা ও উর্দু ছাড়া বাকি ৩৯টি আদিবাসীদের ভাষা। এর মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন হয়েছে, হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “মানবাধিকার হতে হবে সবার জন্য। রাষ্ট্রকে সবার জন্য ভাবতে হবে।”

সভায় কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, “আদিবাসী অধিকারকর্মীদের মধ্যে যারা ভূমির অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তারা হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। দখলদারেরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। এসব মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে শেষ পর্যন্ত আপসে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আমরা সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়ালে তারা লড়াইয়ের শক্তি পাবেন।”