উৎসবের রঙ মণ্ডপে মণ্ডপে

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে মণ্ডপগুলোতে; রাত পোহালেই দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। 

সাইমুম সাদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2021, 03:04 PM
Updated : 10 Oct 2021, 03:47 PM

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মাস্কে নাভিঃশ্বাস ওঠা জীবনে উৎসবের রঙয়ের অপেক্ষায় সবাই থাকলেও সংক্রমণ এড়ানোর নানা বিধিনিষেধের মধ্যে এবারও পূজা করতে হবে।

ষষ্ঠীপূজার দিন সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পাঁচদিন ব্যাপী এ উৎসব; শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার ইতি ঘটবে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে চেপে; ফিরবেন দোলায় চেপে।

রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্যান্ডেলের সাজসজ্জার পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছার কাজ চলছে: রঙ-তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রংমিস্ত্রিরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দেশজুড়ে এক হাজার ৯০৫টি মণ্ডপ বেড়েছে; মোট মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১১৭টি।

ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, এ বছর ঢাকায় ২৩৮টি মণ্ডপে পূজা হবে; গতবারের তুলনায় মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৫টি।

কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বছর পূজায় কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে না। মন্দিরের প্রবেশ পথে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা লাইন রাখা হবে।

দুর্গাপূজা ঘিরে‘কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পরিদর্শন করে তিনি মহামারীর এই সময়ে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর জোর দেন।

কানে উঠছে দুল, বেদিতে ফুটছে ফুল

দুর্গাপূজা শুরুর একদিন আগে মণ্ডপগুলোতে সাজসাজ রব চলছে; কোথাও কোথাও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

রোববার দুপুরে রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, বেদিতে তোলার আগে প্রতিমাকে শেষবারের মতো সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পী সুব্রত পাল। প্রতিমার কানে দুল পরিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

দেড় মাস ধরে তিনিসহ ছয়জন কারিগর মিলে এ প্রতিমা তৈরি করেছেন।

সুব্রত জানান, পূজা শুরুর আগেই প্রতিমাকে বেদিতে তোলা হবে। তার আগে শেষবারের মতো সাজসজ্জার বিষয়গুলো দেখভাল করছেন তিনি। এর মধ্যে চুল পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শাড়ি পরানোর কাজও বাকি কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার তরুণ সুব্রত আট বছর ধরে প্রতিমাশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, “মাকে ‍বেদিতে তোলার পর সবাই যখন আনন্দ করে তখন আমারও খুব ভালো লাগে। এটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা।”

রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমের পূজা কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এখন প্রসাদ কেনার কাজ চলছে।

“করোনাভাইরাস পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উন্নতি ঘটেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিয়েছে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি প্রদানের পর্ব আলাদা আলাদা গ্রুপে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদের নেতৃত্বে থাকছেন দুই নারী। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন চৈতী রাণী বিশ্বাস ও তিলোত্তমা সিকদার।

এটিকে ‘নারীশক্তির জয়’ হিসেবে দেখছেন উৎপল।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মধ্যে অনেকে কষ্টে, ব্যথায় ছিলেন। সেখান থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমরা প্রার্থনা করব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, বেদির চারপাশে ককশিটের তৈরি ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলছেন চারুকলার একদল শিক্ষার্থী; বেদির সামনে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায় সময় কাটছে তাদের। মণ্ডপের ভেতরে সিলিং ফ্যানের ঝুল পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা; চারপাশে রঙ করায় ব্যস্ত সময় কাটছে রংমিস্ত্রীদের।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে; রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা লাইন তৈরির কাজ চলছে।

কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রস্তুতি শেষ; এখন শুধু পূজার আনুষ্ঠানিকতার বাকি।

রমনা মন্দিরের সামনে বসছে মিষ্টির দোকান

কালী মন্দিরের সামনে শ্রী দুর্গা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামে একটি মিষ্টান্নের দোকান বসানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। রমনা মন্দিরে গত ১৫ ধরে এ দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানি মঙ্গল। দই, লাড্ডুসহ নানা পদের মিষ্টান্ন বিক্রি করেন তিনি।

মঙ্গল জানান, গত বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দোকান বসাতে পারেননি। এবার বিক্রি বাড়বে বলে আশায় আছেন তিনি।

তার দোকানের একটু দূরে আরেকটি মিষ্টান্নের দোকান বসেছে; সেখানে জিলাপি তৈরিতে ব্যস্ত এক কারিগর জানালেন, এবারই প্রথম রমনা মন্দিরে দোকান বসিয়েছেন তারা।

এবার পূজা মণ্ডপের আশেপাশে কোনো দোকানপাট ও মেলা বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বিষয়টি নিয়ে শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উৎপল বলেন, মণ্ডপে প্রসাদ সরবরাহের জন্যই মূলত কয়েকটি দোকান বসেছে। এর বাইরে আর কোনো দোকান বসতে দেওয়া হবে না।

অনুষ্ঠান সূচি

মহাসপ্তমী (মঙ্গলবার): সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা।

মহাঅষ্টমী (বুধবার): সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর অষ্টমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে সন্ধি পূজা আরম্ভ ও সমাপনী রাত ১২টা ৪২ মিনিটে। মধ্যাহ্ণ মহাপ্রসাদ বিতরণ।

মহানবমী (বৃহস্পতিবার): সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা।

বিজয়া দশমী (শুক্রবার): সকাল ৯টা ১১ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর দশী বিহিতপূজা ও পূজান্তে দর্পন বিসর্জন।