তালাকের শর্ত পূরণে ‘জালিয়াতি করেছেন’ তামিমার মা: পিবিআই প্রধান

বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়ানোর আগে তার আগের বিয়ের তালাকনামাটি সঠিক কিনা, ক্রিকেটার নাসির হোসেনের তা যাচাই করা উচিত ছিল বলে মনে করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 01:43 PM
Updated : 1 Oct 2021, 07:22 AM

তিনি বলেছেন, “প্রথম স্বামী রাকিব হাসানকে তালাক হওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা দরকার ছিল তামিমার, তা মানা হয়নি। তামিমার মা সুমি আক্তার বেশ কিছু জালিয়াতিও করেছেন।"

রাকিব হাসানের দায়ের করা মামলায় নাসির ও তামিমার পাশাপাশি তামিমার মা সুমি আক্তারকে আসামি করে বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। সেখানে বলা হয়েছে, নাসির ও তামিমার বিয়ের ‘বৈধতা মেলেনি’।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এই অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করার পর তিন আসামি নাসির, তামিমা ও সুমি আক্তারকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছে আদালত।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে ঢাকার হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন রাকিব হাসান। সেখানে তিনি বলেন, তামিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে।

তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু, একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সে তিনি কাজ করেন। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে গতবছর মার্চে সৌদি আরবে গিয়ে তিনি লকডাউনে আটকা পড়েন। তবে ফোন ও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে রাকিবের ভাষ্য।

মামলায় তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও নাসিরের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকেই বিষয়টি তিনি জানতে পারেন।

মামলায় রাকিব অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছেদ না ঘটিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন তামিমা।

মামলা হওয়ার পরদিন ঢাকার বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে নাসির ও তামিমা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তামিমা বলেছিলেন, রাকিবকে ‘তালাক দিয়েই’ নাসিরের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি।

কিন্তু সাত মাস তদন্ত করে পিবিআই যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, আগের স্বামী রাকিব হাসানের সঙ্গে ‘যথাযথভাবে বিচ্ছেদ’ হওয়ার আগেই তামিমা ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন। সুতরাং তাদের এ বিয়ের ‘বৈধতা নেই’। সংবাদ সম্মেলন করে তালাকের বিষয়ে তারা যা বলেছেন, তার ‘সত্যতা মেলেনি’। ডিভোর্সের  যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত থাকে। কাজীকে অবহিত করা, তালাক যাকে দেওয়া হবে তার ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া।

"এই তিনটি শর্তের পরের দুটি তামিমার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে করা হয়নি।”

অভিযোগপত্রে নাসিরের বিরুদ্ধে ‘অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ’ করে নিয়ে যাওয়া, ‘ব্যাভিচার’ এবং তামিমার আগের স্বামীর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সব ‘জেনেও’ বিয়েতে সহায়তা করায় তামিমার মাকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “তালাকের ব্যাপারে যেসব কাগজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো তামিমা সুলতানার মা সুমি আক্তার জালিয়াতির মাধ্যমে করেছেন। ডাক বিভাগের কাগজসহ যেগুলো জালিয়াতি করা হয়েছে, সেগুলো তিনিই করেছেন।”

পিবিআই প্রধান বলেন, তামিমা দাবি করেছেন, রাকিবকে তিনি তালাক দিয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ ২০১৮ সালের তার তোলা পাসপোর্টে রাকিবকেই তিনি স্বামী হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

“তার সমস্ত কর্মকাণ্ডকে এ বিষয়টিকে সাপোর্ট করছে। রাকিবকে যে ঠিকানায় চিঠি দেওয়ার কথা তিনি বলেছেন, সেই ঠিকানায় রাকিব থাকতেন না। আর যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে, সেই চেয়ারম্যানও কোনো চিঠি পাননি।”

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “এক সময় রাকিব হাসানের স্ত্রী ছিলেন তামিমা। কিন্ত নাসির হোসেন তামিমাকে আবারও বিয়ে করেছেন। সুতরাং আগের বিয়ের ডিভোর্স হয়েছে কি-না তা আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল নাসিরের।”