নাসির-তামিমার নামে আদালতের সমন

ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মির বিয়ের ‘বৈধতা মেলেনি’ জানিয়ে পিবিআই অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তাদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছে আদালত। 

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 09:44 AM
Updated : 30 Sept 2021, 10:51 AM

বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করার পর ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম এই আদেশ দেন।

তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের দায়ের করা এই মামলায় নাসির ও তামিমার পাশাপাশি নাসিরের মা সুমি আক্তারকে আসামি করে বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

সেখানে বলা হয়, আগের স্বামী রাকিব হাসানের সঙ্গে ‘যথাযথভাবে বিচ্ছেদ’ হওয়ার আগেই তামিমা ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন। সুতরাং তাদের এ বিয়ের ‘বৈধতা নেই’। সংবাদ সম্মেলন করে তালাকের বিষয়ে তারা যা বলেছেন, তার ‘সত্যতা মেলেনি’। ডিভোর্সের  যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’। 

ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসান আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। তবে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দিয়ে নাসির, তামিমা ও তার মাকে আদালতে হাজির হতে সমন জারির আদেশ দেন।

কেন মামলা

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে ঢাকার হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন মো. রাকিব হাসান। তার বক্তব্য শুনে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার আর্জিতে তামিমার বয়স ২৯ এবং রাকিবের বয়স ৩২ বছর লেখা হয়েছিল। আর ক্রিকেটার নাসিরের বয়স দেখানো হয় ৩০ বছর।

রাকিব সেখানে বলেন, তামিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে।

তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু, একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সে তিনি কাজ করেন। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে গতবছর মার্চে সৌদি আরবে গিয়ে তিনি লকডাউনে আটকা পড়েন। তবে ফোন ও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে রাকিবের ভাষ্য।

তিনি বলছেন, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও নাসিরের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকেই বিষয়টি তিনি জানতে পারেন।

মামলায় রাকিব অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছেদ না ঘটিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন তামিমা।

নাসির ও তামিমা কী বলেছিলেন?

মামলা হওয়ার পরদিন ঢাকার বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে নাসির ও তামিমা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

তামিমা সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিন, “উনি (রাকিব) যতগুলো কথা বলেছেন, এরমধ্যে দুইটা জিনিস ছাড়া (আমাদের বিয়ে হয়েছিল ও আমাদের একটা বাচ্চা রয়েছে) বাকি সব কথা মিথ্যা। এর প্রত্যেকটি প্রমাণ আমাদের রয়েছে।”

 রাকিবকে ‘তালাক দিয়েই’ নাসিরের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন দাবি করে তামিমা বলেছিলেন, “উই আর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। উই আর নট গিল্টি। উই আর ইনোসেন্ট। আমি কোনো ভুল করিনি। হেনস্তা করার জন্য রাকিব এসব করেছে।”

আর নাসির সেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “বিয়ে হয়েছিল, বাচ্চা ছিল। ডিভোর্স হয়েছে। পেপার দেখে আমরা বিয়ে করেছি। আমরা যা করেছি, লিগ্যাল ওয়েতে করেছি, ইলিগ্যাল কিছু করিনি। আমরা যাই করেছি, সেটা আইনগতভাবে ও ইসলামী শরীয়ত মেনে করেছি। সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করেছি।”

আইনিভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করবেন জানিয়ে এই ক্রিকেটার সেদিন বলেছিলেন, “রাকিব সাহেব যেভাবে কথাবার্তা বলছেন …। সে তো আগে তামিমা ছিল; এখন আমার ওয়াইফ। ওকে বলা মানে আমাকে বলা। রাকিব সাহেব কেন, অন্য যে কোনো মানুষই হোক, আমার ওয়াইফকে নিয়ে কোনো ধরনের বাজে মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব এবং তা আইনগতভাবেই।”

পিবিআই কী বলছে?

সাত মাস তদন্ত করে পিবিআই যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, সেখানে যথাযথভাবে বিচ্ছেদ না করেই নতুন বিয়ে করার অভিযোগ আনা হয়েছে তামিমার বিরুদ্ধে।

আর নাসিরের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ‘অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ’ করে নিয়ে যাওয়া, ‘ব্যাভিচার’ এবং তামিমার আগের স্বামীর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ।

সব ‘জেনেও’ বিয়েতে সহায়তা করায় তামিমার মাকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তালাক যথাযথভাবে হয়নি জেনেও নাসির বিয়ে করেছেন তামিমাকে। তাদের বিয়ের বৈধতা পাওয়া যায়নি। ডাক বিভাগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে তালাকের নোটিস পাঠানোর যে দাবি তারা করেছেন, তা সঠিক নয়।"

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিস পাননি। তামিমা উল্টো ‘জালিয়াতি’ করে তালাকের নোটিস তৈরি করে তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখিয়েছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ায় তামিমা এখনও ‘আইনত রাকিবের স্ত্রী’।

পিবিআই বলেছে, ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা ‘অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ’। ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে ‘অবৈধ’। তারা দণ্ডবিধির ৪৬৮/৪৭১/৪৯৪/৪৯৭/৫০০/৩৪ ধারায় ‘অপরাধ করেছেন’ বলে তদন্তে ‘প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত’ হয়েছে।

এ মামলায় যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের করাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।