বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সদস্য মো. মাহমুদুর রহমান শনিবার জানান, শিগগিরই তথ্য-উপাত্ত বিনিময় শুরু হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চার মাসের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের মাধ্যমে পানি বন্টন চুক্তির একটা কাঠামো দাঁড় করানোর পর্যায়ে যেতে পারি আমরা।
“অভিন্ন ৬ নদীর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনও কাজ চলছে। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সালের ডেটা শেয়ার হয়েছে। আরও তথ্য-উপাত্ত দরকার, এখনও আলাপ আলোচনা চলছে।”
বছরের শুরুতে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের মধ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। সবশেষ সভায় অভিন্ন ছয় নদী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আসা মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বন্টন চুক্তি সই নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অভিন্ন।
১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়। অভিন্ন বাকি নদীর পানি বন্টন নিয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। তবে চুক্তির আশায় দুই দেশের ৬টি নদীর ২০ থেকে ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক যুগ আগে তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন তিস্তা ও ফেনীসহ ৮টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তির আভাস দিয়েছিলেন
অভিন্ন এসব নদীর মধ্যে গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা ব্যারেজ, মহানন্দা নদীর উজানে মহানন্দা ব্যারেজ ও তিস্তা নদীর উজানে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করেছে ভারত।
এছাড়া ভারতে মনু নদীর উজানে মনু ব্যারেজ, খোয়াই নদীর উজানে খোয়াই ব্যারেজ, গোমতি নদীর উজানে মহারানী ব্যারেজ ও মুহুরী নদীর উজানে কালসি ব্যারেজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকেও অভিন্ন এই ছয়টি নদীর বিষয়ে চুক্তি সইয়ের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রগতি হয়।
‘স্বার্থ অভিন্ন, উইন উইন সিচুয়েশনে আসতে হবে’
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এগোনো দরকার। আমাদের স্বার্থ অভিন্ন, উইন উইন সিচুয়েশনে আসতে হবে। স্টাডি করে এগোতে হবে।
“বিশেষজ্ঞ, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়, বিভাগক সম্পৃক্ত করে সমতার ভিত্তিতে, আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে এগোনো উচিত।”
তিনি জানান, এ ছয়টি নদীর কোথাও কোথাও ভাঙন রয়েছে, পানি কখনও শুকিয়ে যায়, প্রবাহে অসুবিধা রয়েছে। কোনো জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে, নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া একটা সময় শুষ্কতা বিরাজ করছে, আবার বর্ষার সময় পানি বেশি আসায় বন্যা হচ্ছে। ফেনী নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচিও রয়েছে।
সাবেক এ আমলা বলেন, “সবগুলো নদী নিয়েই ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রাপ্তির ব্যাপার, ভাগাভাগির বিষয় রয়েছে। এটা নিয়ে আমরা জেআরসির সঙ্গে বসেছিলাম, আমরা অনেক তথ্য উপাত্ত, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে আমরা সাজেশন দিয়েছি।”
নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানের মতে, সব নদী নিয়ে আসলে এগোনো উচিত। তাদের ও আমাদের স্বার্থ সুরক্ষা করে কাজ করতে হবে। যৌথ ব্যবস্থাপনার আগে ‘হাইড্রোমরফলজিক্যাল’ এবং ‘ইকলোজিক্যাল স্টাডি’ করা উচিত।
চুক্তি-কাঠামো তৈরির পথে অগ্রগতি
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরাও ডেটা শেয়ার করছি, তারাও ডেটা দিচ্ছে। পর্যাপ্ত তথ্য বিনিময় জরুরি। …আলোচনা চলছে।”
বিশেষজ্ঞরা জানান, নদীর পানি যেখানে পরিমাপ করা হয় সেখানকার তথ্য; উজানে প্রত্যাহার হয়েছে কি না, বাংলাদেশে নদীগুলোর পানি প্রত্যাহার নিয়ে যে তথ্য আছে-সেসব তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের ক্ষেত্রে জরুরি।
সমীক্ষা করা, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে পানির হার ও ভাগাভাগির ক্ষেত্রে পানির হার কেমন হবে এবং চুক্তির মেয়াদ- এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তুতি থাকতে হবে।
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মাহমুদুর রহমান বলেন, “ছয়টা নদীর তথ্য-উপাত্ত নেওয়া-দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। একা অগ্রসর হলে তো হবে না; উভয় পক্ষকে এগোতে হবে।
“আমরা কাজ করছি। আশা করি, দুই চার মাসের মধ্যে কিছু তথ্য উপাত্ত বিনিময় করা শুরু করতে পারব। আরও কিছু তথ্য উপাত্ত ভারতীয় দিক থেকে পেলে ছয় নদীর পানি বন্টনের যে ফ্রেমওয়ার্ক, সেটা করার জন্য আমরা অগ্রসর হতে পারব।”
আরও পড়ুন: