মহামারীকালের বিধি-নিষেধে প্রায় তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর নদীতে চলতে লঞ্চগুলো আবার তৈরি হলেও স্বাস্থ্যবিধির শর্ত মানা সম্ভবপর হবে কি না, তা নিয়ে লঞ্চকর্মীদের মনেই রয়েছে সংশয়।
Published : 10 Aug 2021, 10:10 AM
তারা বলছেন, বেশ কিছু দিন বিরতির কারণে এখন লঞ্চে চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক; আর কেবিনে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা গেলেও ডেকে তা কঠিনই হয়।
করোনাভাইরাস মহামারীকালে সর্বশেষ লকডাউনে গত ২৩ জুলাই থেকে সব গণপরিবহন বন্ধ। তবে বুধবার থেকে বিধি-নিষেধ শিথিল হওয়ায় লঞ্চও চলবে।
এই মহামারীর মধ্যে এর আগে লঞ্চ চলাচলের সময় ডেকে গাদাগাদি যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। এবার যখন লকডাউন উঠছে, তখনও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিই চলছে বলে শঙ্কা সবার মনেই।
তার মধ্যেই সোমবার ঢাকার সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সব লঞ্চ এসে পন্টুনে ভিড়ে আছে। এতদিন পন্টুন ছিল খালি।
দুদিন আগে লঞ্চ ভেড়ানোর কারণ জানতে চাইলে ‘স্বর্ণদ্বীপ প্লাস’ নামে একটি লঞ্চের কর্মচারী বলেন, “আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম, আর জায়গাটাও আয়ত্তে রইল।”
সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর ৪৩ রুটে প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি লঞ্চ চলাচল করে।
বরিশাল-পটুয়াখালীগামী এমভি সুন্দরবন লঞ্চের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালাবেন তারা।
পারবেন কি- প্রশ্নে তিনি বলেন, “কেবিনে কোনো সমস্যা হয় না, তবে ডেকের যাত্রীদের নিয়ে সমস্যা হয়।”
প্রতিটি লঞ্চে কেবিনের সংখ্যা অল্প, আর ভাড়াও বেশি। বিপরীতে ডেকে কম ভাড়া, ফলে লঞ্চ যাত্রীদের বেশিরভাগই হয় ডেকে।
পারাবত লঞ্চের এক কর্মচারী বলেন, “বুধবার থেকে দেইখেন কেমন যাত্রীর চাপ। মানুষের মনে করবে, কখন না আবার লঞ্চ বন্ধ করে দেয়।”
তিনিও ডেকে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সংশয় জানিয়ে বলেন, “অনেক বলার পরও ডেকের যাত্রীরা শোনে না।”
এমভি ইয়াদ লঞ্চের কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, লঞ্চ চলাচল একেবারে বন্ধ করে দিলে বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
“হঠাৎ হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ ঘোষণায় যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। অনেক বেশি যাত্রীর চাপ থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সামাল দেওয়া যায় না।”
তার মতে, লকডাউনেও যদি লঞ্চ চলাচল বন্ধ না করে সরকার। তাহলে যাত্রীর চাপ সব সময় কম থাকবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা যাবে।
লঞ্চকর্মীদের অভিযোগ
মহামারীর মধ্যে লঞ্চ বন্ধ থাকায় অনেক লঞ্চকর্মী বেতনহীন অবস্থায় থেকে সঙ্কটে দিন কাটিয়েছেন।
শ্রমিকরা বলেন, সরকারের ত্রাণ সবাই পায়নি। কোনো কোনো মালিক বেতন দিলেও অনেক মালিক আবার কিছুই দেয়নি।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই লকডাউনে যাত্রীবাহী নৌযানের প্রায় ৫০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়ে।
“কিছু মালিক বেতন দিলেও অনেক মালিক বেতন দিতে পারেনি। আর সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ১৬০০ জনকে ২৫০০ টাকার সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।”
মিতালী লঞ্চের মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বড় লঞ্চ কোম্পানির শ্রমিকরা বেতন পেলেও ছোট লঞ্চের মালিকরা তা দিতে পারেনি।
চাকরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা কেউ বলতে চাননি কোন কোন মালিক বেতন দেননি।
এমভি সুন্দরবন লঞ্চের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, তাদের নয়টি লঞ্চের নয় শতাধিক কর্মীর সবাইকেই বেতন দেওয়া হয়েছে।
এমভি ইয়াদ লঞ্চের অন্যতম মালিক মো. মামুনও দাবি করেন, তাদের কর্মীরা বেতন পেয়েছে।
তবে লঞ্চ বন্ধ থাকায় মালিকদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলেন তিনি।
“ঋণের কিস্তি দিতে হয়েছে। সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছি কিন্তু পাইনি।”