শাহবাগে মুশতাকের গায়েবানা জানাজা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সমাবেশে ও গায়েবানা জানাজা হয়েছে ঢাকার শাহবাগে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2021, 01:45 PM
Updated : 26 Feb 2021, 01:58 PM

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

একইসঙ্গে এই আইনে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।

এ ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে সমাবেশ থেকে ৩ মার্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকে এর জন্য দায়ী।

“বিচারপতিরা যদি এই হত্যার দায় উন্মোচন না করেন, তাহলে তারাও এই হত্যায় দায়ী। বিচারপতিদের বলা উচিত এই আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, এই আইন কোনোক্রমেই থাকতে পারে না।”

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে রায় দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান জাফররুল্লাহ।

“বিচারপতিরদের আহ্বান করি, আপনারা এটাকে মৌলিক অধিকার হরণের রায় দিন। নতুবা আপনাদেরও একদিন পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে হবে। ডিজিটাল অ্যাক্ট দিয়ে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “মুশতাক তরুণদেরকে স্বপ্ন দেখাতেন। এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটার স্বপ্নকে শুধু হত্যা করা হয়নি, এই মানুষটাকেও আজকে হত্যা করা হয়েছে।

“আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে দায়ী করছি। মুশতাক হত্যার জন্য, কার্টুনিস্ট কিশোরের জেলে থাকার জন্য যারা এই আইন তৈরি করেছে, যারা প্রয়োগ করছে তারা সকলেই দায়ী।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, প্রমাণিত হল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু মুখের ভাষা নয় প্রাণও কেড়ে নেয়। একজন নিরীহ মানুষ ছয় বার আবেদন করেও জামিন পাননি। কিন্তু এই রাষ্ট্রে লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, খুনিদের ক্ষমা করে বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশ পাঠানো হয়। এই রাষ্ট্র আসলে মাফিয়াদের লালন পালন করে।”

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “মুশতাকের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, এই সরকার জনগণের সরকার না৷ এই রাষ্ট্র খুনি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে৷”

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, “আমাদের মত-পথের ভিন্নতা আছে। কিন্তু আজ যদি আমরা সংগঠিত হতে না পারি, একত্রিত হতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মত হবে।”

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে লেখক মুশতাকের গায়েবানা জানাজা হয়। সেখানে ইমামতি করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসাইন।

এরপর লেখক মুশতাকের একটি লেখার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

বাংলাদেশ  ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় গায়েবানা জানাজা ও প্রতিবাদ সমাবেশে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, লেখক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক তারেক রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহবায়ক আব্দুর রহমান বক্তব্য দেন।