স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পাঠ বাধ্যতামূলক করার দাবি

স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলেছেন এক আলোচনা সভার বক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2021, 03:59 PM
Updated : 22 Feb 2021, 03:59 PM

সোমবার ‘ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান এবং আমাদের করণীয়’  শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “প্রাথমিক পর্যায় থেকে আরম্ভ করে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

“এখন আমাদের এবং বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় পরিচিত করার জন্য বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সেরা সাহিত্য সম্ভার এবং বিজ্ঞান ও গবেষণামূলক গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদের পাশাপাশি বালা ভাষার সেরা নিদর্শনসমূহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় অনুবাদে বাংলা একাডেমিকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনায় যোগ দিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এখনও আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে পারিনি। পারিনি উচ্চ শিক্ষা বা উচ্চ আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। অন্যদিকে রোমান হরফে বাংলা লেখা বা রোমান হরফকে বাংলায় রূপান্তর করার এক জঘণ্য প্রবণতা আমাদের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে।

“আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন-যেমন বানান পরীক্ষক, ওসিআর, স্পিচ টু টেক্সট-টেক্সট টু স্পিচ ইত্যাদি তৈরি হয়নি। আশার কথা যে সরকার ১৭ সাল থেকে ভাষার জন্য ১৬টি টুলস ব্যবহার করার জন্য ১৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।”

ওয়েবিনারে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “বাংলার রায় লেখা হচ্ছে, যা আমাদের আনন্দিত করেছে। সমস্যা হচ্ছে মৌলিক আইনগুলো ইংরেজি ভাষায় লেখা। সেগুলো বাংলায় ভাষান্তর করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

“সরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমন্বয় করে আইনগুলো বাংলায় ভাষান্তর করতে হবে। বাংলায় রায় হলে বিচারপ্রার্থী নিজেরাই রায় বুঝতে পারবে। সব দেশেই আদালতের ভাষা তাদের নিজস্ব ভাষা।”

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “উন্নয়নের ইতিহাসের সঙ্গে ভাষার ইতিহাস জড়িত। জাপানের উন্নয়নের মূল কারণ মাতৃভাষাকে গুরুত্বারোপ। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। আমাদের নিজস্ব ভাষানীতি নেই। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী ও সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, “বাংলা ভাষা চর্চার জন্য রাজনৈতিক নীতি ঠিক করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও মান বজায় রাখার জন্য সরকারের নিকট বড় বরাদ্দের প্রস্তাব করা দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরতে হবে।”

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘পৃথিবীর ভাষা সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এরকম বাংলাদেশেও ভাষার সংখ্যা কমছে। মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার উদ্যোগ খুবই কম। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভুল বাংলা লেখা হচ্ছে।

“আমরা যদি সঠিকভাবে এই বিষয়টা সমাধান না করি, তবে ভবিষ্যতে আমাদের যথেষ্ট দুর্গতি আছে। বাংলাদেশে বাংলার উপর বেশ কিছু সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশে বাংলার ওপর বিশাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে তা বাংলা ভাষার প্রসারের জন্য সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।”