ছয় বছর আগে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করবে ঢাকার সন্ত্রাস দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ আটজন এই মামলার আসামি, তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই জঙ্গি দলের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই দীপনকে হত্যা করা হয়।
পলাতক দুই আসামি জিয়া ও আকরামকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে রাজিয়া রহমান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিয়া ও আকরাম পলাতক। মূল হোতাই তো এই দুজন। সুতরাং আসলে এদেরকে ধরতে না পারলে, এদের বিচারটা না হলে পুরো প্রক্রিয়াই অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।”
২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম।
তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
গুলশান হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। তখন পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের কয়েকজন শীর্ষনেতা র্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হলেও জিয়ার খোঁজ এখনও মেলেনি।
পলাতক জিয়ার বিরুদ্ধে অভিজিৎ হত্যা মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি মামলা মামলা রয়েছে।
দীপনকে হত্যার পর ওই দিনই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিন বছর পর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৪ অগাস্ট টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার পুরস্কারের জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির দীপন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়ার নাম বলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। দীপন হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহ বা আনসার আল ইসলাম জড়িত থাকার কথাও প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার ওই আট আসামির বিচার শুরু হয়। জিয়াসহ দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরুর এক বছর তিন মাসের মাথায় আলোচিত এ মামলা রায় ঘোষণা হচ্ছে।
আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তির আশা রেখে রাজিয়া রহমান বলেন, “এখনও পর্যন্ত সব কিছু পজিটিভলি এগোচ্ছে। রায়টা বেশ দ্রুতই পাচ্ছি। অন্যান্য অনেক মামলার মতো রায়টা বিলম্বিত হচ্ছে না। সেটা একটা ভালো দিক।
“আমরা অপেক্ষা করছি, দেখি রায়টা কী হয়। রায়ের পর রায় কার্যকর হওয়ারও বিষয় আছে।”
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৩ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। কারাগারে থাকা ছয় আসামি গত ৫ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। অপরদিকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।