চাঁদপুরের সেই কিশোরী মা ও তার শিশুকে স্বামীর জিম্মায় দিতে বললো হাই কোর্ট

গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালিকা) জন্ম নেওয়া শিশু ও তার কিশোরী মাকে স্বামীর জিম্মায় দিতে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2021, 11:20 AM
Updated : 14 Jan 2021, 11:20 AM

কিশোরীর স্বামীর আবেদনের শুনানির করে কিশোরীর মতামত জেনে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

হাই কোর্টের নির্দেশে এদিন গাজীপুরের শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে শিশুসহ ওই কিশোরীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. তারেক আজিজ ও সজল আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি।

আইনজীবী খোকন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের আদেশটি চাঁদপুরের ট্রাইব্যুনালকে পাঠালে ট্রাইব্যুনাল আদেশটি শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রকে পাঠাবেন, তখন মেয়েটি তার স্বামীর জিম্মায় যেতে পারবে।”

এ আইনজীবী বলেন, “যেহেতু অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা আদতে ঘটেনি, তাই শাশুড়ির করা অপহরণ ও ধর্ষণ মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হবে। মেয়েটির জবানবন্দির পর এই মামলার আর কার্যকারিতা থাকতে পারে না।”

চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার এই কিশোরী তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গত বছর ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন। কাবিনে মেয়েটির বয়স দেখানো হয় ১৮ বছর।

কিন্তু এ বিয়ে মেনে নেয়নি কিশোরীর পরিবার। এক পর্যায়ে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাজিগঞ্জ থানায় জামাতার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করেন শাশুড়ি।

মামলার এজাহারে কিশোরীর বয়স দেখানো হয় ১৩ বছর ১১ মাস। যদিও জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী কিশোরীর বয়স হয় এখন ১৭ বছর। (২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম)। আবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মেয়েটি তার বয়স ১৬ বছর উল্লেখ করেছে।  

কিশোরীর মা যখন তার জামাতাকে আসামি করে মামলা করেন, তখন মেয়েটি ও তার স্বামী ছিলেন আত্মগোপনে। 

মামলা হওয়ার পর কিশোরীর স্বামীকে গত বছরের ২৬ মে গ্রেপ্তার করে হাজিগঞ্জ থানার পুলিশ। কিশোরীকেও তখন নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। ততদিনে ওই কিশোরী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

গ্রেপ্তারের পর কিশোরীর স্বামীকে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। সেদিন কিশোরীর মা মেয়েকে নিজের জিম্মায় নিতে আবেদন করেন। কিন্তু কিশোরী পরিবারের কাছে ফিরতে না চাইলে ট্রাইব্যুনাল তাকে সেইফ কাস্টডিতে (গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে) পাঠায়।  

পরে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামিন চেয়ে আবেদন করেন কিশোরীর স্বামী। চাঁদপুরের আদালত তা নাকচ করে দিলে তিনি হাই কোর্টে আসেন। এরপর গত বছর ২০ অক্টোবর হাই কোর্ট তাকে ছয় মাসের জামিন দেয়।

এদিকে গত বছরের ২৭ অক্টোবর গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেই তাদের সন্তানের জন্ম হয়। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কিশোরীর স্বামী তার স্ত্রী-সন্তানকে নিজের জিম্মায় পেতে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলে গত বছর ১০ নভেম্বর আবেদনটি না মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল। তখন তিনি আবার হাই কোর্টে আবেদন করেন।  

২৩ ডিসেম্বর আদালত আপিলের শুনানি নিয়ে গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ককে কিশোরী ও তাদের সন্তানকে আদালতে নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়।

সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তারা হাজির হলে আদালত কিশোরী ও তার স্বামীর বক্তব্য শুনে তাদের পক্ষে আদেশ দিল।