মুন্না ভক্ত নামের ২২ বছর বয়সী ওই তরুণ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডোম যতন কুমার লালের ভাগ্নে। দুই বছর ধরে তিনি মামার সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করে আসছিলেন।
প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জিসান উল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানান।
এ বিষয়ে শুক্রবার পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয়। তবে কীভাবে মুন্নার ওই জঘন্য অপরাধ ধরা পড়ল, সেই তথ্য সিআইডির এক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পেরেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ঘটনায় নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয় সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে। সেসব আলামতের ডিএনএ প্রোফাইল করে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষ্যের জন্য ডেটাবেইজ তা সংরক্ষণও করা হয়।
গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে পাঠানো কয়েকটি এইচভিএস-হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষায় পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার পর দেখা যায় সফটওয়্যার প্রতিটি ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করছে।
এসব ঘটনায় কোনো ‘সিরিয়াল কিলার’ জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ উঁকি দিতে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তাদের মনে। এরপর সিআইডি তদন্তে নামে।
কিন্তু তদন্তে ঘটনা প্রবাহ ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “প্রথমে হিসাব মিলছিল না। পরে নিহতদের আলামত এবং সার্বিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে এই ধারণা দৃঢ় হতে থাকে যে কেউ একজন কোনোভাবে মৃতদেহের ওপর যৌন লালসা চরিতার্থ করেছে।”
ময়নাতদন্তের জন্য রাতে কোনো লাশ মর্গে গেলে তা ব্যবচ্ছেদ না করে পরের দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে সিআইডি কর্মকর্তারা জানতে পারেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাতে কোনো লাশ গেলে সেই রাতে সেখানে পাহারায় থাকতেন মুন্না।
“লাশ কাটা ঘরেই সে তখন ঘুমাত। ওই পাঁচটি ঘটনার ময়নাতদন্তের আগের রাতেও মুন্না মর্গে পাহারায় ছিল বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন ওই জঘন্য অপরাধের সাথে তার জড়িত থাকার সন্দেহ জোড়ালো হয়।”
এদিকে সিআইডি এসব বিষয়েই অনুসন্ধান করছে বুঝতে পেরে গা ঢাকা দেন মুন্না। তদন্তকারীরা তখন তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যান। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব ন্যক্কারজনক অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মুন্না।”
মুন্নার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে।
“২২ বছর বয়সী ডোম সম্প্রদায়রে মুন্না ভক্ত যাদের লাশের সঙ্গে যৌনতা করেছে, তাদের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। আপাতত ধরে নেওয়া যায়, এই অপকর্মে তাকে কেউ প্ররোচিত করেনি। রাতে একা একা লাশ কাটার ঘরে থাকত। হয়ত সেখান থেকেই তার মানসিক বিকৃতি ঘটে এবং এসব অপরাধ শুরু করে।”