আসুরিক শক্তি বিনাশের প্রার্থনায় মহাষ্টমীর অঞ্জলি

নবরাত্রীর অষ্টম দিনে পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে পালিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2020, 01:44 PM
Updated : 24 Oct 2020, 01:44 PM

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আড়ম্বরের ক্ষেত্রে খানিকটা সীমাবদ্ধতা রেখেই শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শুরু হয় অষ্টমীর আয়োজন।

সকাল থেকে অঞ্জলি এবং মাঝে সন্ধিপূজায় প্রার্থনায়রত হয় ভক্তরা। স্বাস্থ্য সতর্কতায় এবার মহাপ্রসাদ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়।

তবে গত দুইদিনের তুলনায় অষ্টমীতে মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তদের উপস্থিতি ছিল খানিকটা বেশি । মাস্ক পরিধান ছাড়া মণ্ডপের সামনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছিলো নিষেধাজ্ঞা। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় তেমন সচেনতনতার বালাই ছিল না ভক্তদের মধ্যে।

শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহাঅষ্টমীর আয়োজন

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভক্তদের অঞ্জলী দেওয়ার সুযোগ করে দিতে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি। ভক্তদের সকলের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। মানুষের আবেগকে দমিয়ে রাখাটা কঠিন।”

তিনি বলেন, “মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, সারা পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাক, সকলে সুস্থ থাকুক, বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার বন্ধ রাখা হয়েছে কুমারী পূজার আয়োজন। তবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিবারের মতো কুমারী পূজা ছাড়াই সাত্ত্বিকভাবে মায়ের আরাধনার সকল আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানান কিশোর রঞ্জন মণ্ডল।

তিনি বলেন, “মায়ের পূজা হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। ঢাকায় একমাত্র রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হয়ে থাকে। যেটা এবার হচ্ছে না।  আমরা এবার সরাসরি মায়ের সাধনা বা আরাধনায় সাত্ত্বিকভাবে পূজার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করছি।”

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেননাথ মজুমদার বলেন, “অষ্টমী পূজায় আমরা কুমারী পূজার মাধ্যমে মায়ের মাতৃশক্তির আরাধনা করি।  নারীর মধ্যে যে নারী মাতৃশক্তি নিহিত সে রূপেরই বন্দনা করি।

মহঅষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূণ্যার্থীদের ভিড়

“সারা দেশব্যাপী নারীর প্রতি যে নিপীড়ন, অন্যায় ঘটেই চলেছে, সেই আসুরিক শক্তিকে প্রতিহত করে প্রতিটি নারীর জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলব এই হোক এদিনের প্রার্থনা।”

মন্দির প্রাঙ্গণে খানিকক্ষণ পর পর স্বেচ্ছাসেবকদের কণ্ঠে শোনা যায় “আপনারা প্রার্থনা শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরে যান। যত শিগগিরই ঘরে ফিরে যাবেন, আপনি ততখানি নিরাপদ থাকবেন। এবারে মায়ের আরাধনা হোক গৃহ থেকেই।”

তবুও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভক্তদের ভিড় ছিল বেশি। দুপুরের পর অঞ্জলি শেষে ভীড় কমতে থাকে।

উত্তর বাড্ডা থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অঞ্জলি দিতে এসেছেন রীপা রানী দাস।

তিনি বলেন, “এবারের পূজায় মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে পুরো পৃথিবী আবারও আগের রূপে ফিরে যায়, করোনাভাইরাসের হাত থেকে আমরা সবাই মুক্ত হওয়ার প্রার্থনা করি মায়ের কাছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রসঙ্গে রীপা বলেন, “আশা করব সকলের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক, মানুষ আরও মানবিক হয়ে উঠুক। আমরা পাশবিকতামুক্ত একটি সমাজ চাই।”

ধানমণ্ডি থেকে বাবার সাথে পূজা দেখতে আসা উর্মিলা বিশ্বাস বলেন, “এবার পূজায় তেমন উৎসবের আমেজ নেই। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি আগামী বছর যেন আবার আমরা আগের মতো উৎসবে মেতে উঠতে পারি।”

দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। রাজধানীর সব মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং দর্শনার্থীরা সুন্দরভাবে মণ্ডপে আসছেন, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার আশংকা নেই বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে এবার পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের চলাচলে স্ট্যান্ডিং ফোর্স দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তারা নিরাপত্তার বিষয়ে সন্তুষ্ট।”

বুধবার সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙানোর পালা। সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে যান।

এ বছর সারাদেশে তিন হাজার ২১৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার এক হাজার ১৮৫টি কম। এছাড়া ঢাকা মহানগরে এবার মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩২টি, যা গত বছর ছিল ২৩৮টি।

এবার সপ্তমী শুক্রবার হওয়ায় হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী দুর্গা এবার এসেছেন দোলায় চেপে। আর দেবালয়ে ফিরবেন হাতির পিঠে চড়ে।

দোলায় আগমন নিয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’; অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরার প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে।

আর হাতিতে চড়ে দেবী বিদায়ের ফল হয়- ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’ ৷ অর্থাৎ তাতে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয় ৷ সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয় মর্ত্যভূমি ৷