বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শুরুর পরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসে একথা জানান তিনি।
সীমান্তে মানুষ হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা তার দেশের লক্ষ্য বলে জানন দোরাইস্বামী; কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
বুধবার বিকালে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দেওয়ার পর সন্ধ্যায় গুলশানে ভারত ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় সভায় আসেন দোরাইস্বামী।
বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরে নতুন হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
“আমাদের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এই বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। আমি একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই যে, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটি কখনোই হ্রাস পাবে না।”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় রয়েছে বলে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
নিবিড় সেই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে দোরাইস্বামী বলেন, “নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে।
“আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোনো সুযোগই ছাড়ব না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাব। এই নির্দেশ আমাদের সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
মতবিনিময় সভায় সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে দোরাইস্বামী বলেন, “এটাকে (সীমান্ত হত্যা) পুরোপুরি বন্ধ করা আমাদের লক্ষ্য। যেভাবে আমাদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক সম্প্রতি বলেছেন সর্বোচ্চ রকম সহনশীলতা দেখানো এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় মারণঘাতি নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
“মূলত এটা একটি আইনশৃঙ্খলা সমস্যা এবং আইনশৃঙ্খলার বিষয় হিসাবে এটাকে দেখতে হবে। এটা নিয়ে আপনাদের মনোভাব কী আমি বুঝতে পারি।”
ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সবসময় বাংলাদেশের বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে থাকে সীমান্ত হত্যা।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৯ বাংলাদেশির। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে। পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের পর।
গত বছর এই সময় (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সীমান্তে বিএসএফের গুলি বা নির্যাতনে মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন বাংলাদেশি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও সেটি তিন গুণ বাড়ে ২০১৯ সালে।
সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
গত মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করে হাই কমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, “এটার কোনো সহজ সমাধান নেই, তবে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সমাধান আমাদের একসঙ্গে খুঁজতে হবে। আমি আপনাদের এখন এ বিষয়ে এ বেশি কিছু বলতে পারছি না, তবে সর্বোচ্চ রকম প্রচেষ্টা নেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কানেকটিভিটি জোরদার করতে যৌথ প্রকল্পগুলোর সম্পন্ন হওয়া দেখতে চাই আমি, যাতে কানেকটিভিটির অংশদারিত্বে আমাদেরকে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে তার ফিরতি পাওনা যাতে বাংলাদেশের মানুষ পেতে পারে।”
করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে থাকবে জানিয়ে দোরাইস্বামী বলেন, “আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানির উৎপাদক হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ভ্যাকসিন নিয়েও কাজ করছি আমরা।
”… আমরা যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব ভ্যাকসিন পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশদারিত্বে যাব। শিগগির ভারতীয় ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে যাবে, তখন বাংলাদেশ সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবে এখানেও পরীক্ষায় যাব।”
যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে যেতে হলে এক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে কেবল বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।