স্ত্রীসহ নাসিম রিয়েল এস্টেটের মালিক গ্রেপ্তার

সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় কিছু জমি দখল করে নাসিম রিয়েল এস্টেটের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে প্লট-ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া মো. ইমাম হোসেন নাসিমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2020, 11:54 AM
Updated : 1 Oct 2020, 12:43 PM

রাজধানীর রূপনগর এলাকায় বুধবার বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নাসিম গ্রুপের মালিক নাসিম (৬০) এবং তার স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নাসিম-সালমা দম্পতির বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। রূপনগর আবাসিক এলাকায় নাসিমের বাসায় ও চিড়িয়াখানা রোডে নাসিম রিয়েল স্টেটের অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল, এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার জাল নোট, ১৪০০ ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক বই এবং ৩২টি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।

সালমা নাসিমের তৃতীয় স্ত্রী জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৩ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন নাসিম। তার চার সন্তান রয়েছে।

নাসিম সম্পর্কে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ভোলা জেলার দৌলতখান থানার মেদুয়া গ্রাম থেকে নাসিমের বাবা ১৯৫০ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৬০ সালে ঢাকার বাড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন নাসিম। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া থাকাকালীন নাসিম আজিমপুরের একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক পাস করেন। পরে মিরপুরের একটি হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং পরবর্তীতে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

নাসিম কলেজে লেখাপড়া করার সময় ঠিকাদারিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই ঠিকাদারি ব্যবস্যা চালালেও ২০০২ সাল থেকে তার প্রতারণা শুরু হয়।

“২০০২ সাল থেকে সে অভিনবভাবে প্রতারণামূলক কৌশলের আশ্রয় নেয়। নিজেকে নাসিম রিয়েল স্টেট কোম্পানির মালিক বলে পরিচয় দেয় এবং সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় কিছু ব্যক্তির সহায়তায় জায়গাজমি দখল করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। এখানে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার কথা বলে ৫ হাজার সাধারণ মানুষের সাথে বিভিন্নভাবে চুক্তি করে বায়নার নামে প্রায় তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

“এর পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে নাসিম রিয়েল স্টেট লিমিটেড ছাড়াও নাসিম ডেভেলপার লিমিটেড, নাসিম এগ্রো ফুড লিমিটেড, নাসিম বাজার, এসবি ফাউন্ডেশন, ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস, সাপ্তাহিক ইমারত অর্থ, নাসিম শিপ বিল্ডার্স, নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনসালটেনসি, নাসিম ট্রেডিং লিমিটেড, সাহানা আই হাসপাতাল, বাংলা নিউজ ১৬, নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার, নাসিম রিফাইন্ড সুগার এবং নাসিম বেভারেজ নামে ১৬টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।”

শাহ আলী থানার চিড়িয়াখানা রোডের ২৫/২৯ নম্বর হোল্ডিয়ে নাসিম গ্রুপের অফিসে অভিযান চালিয়ে এই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায় বলে মোজাম্মেল হক জানান।

হাজার হাজার মানুষের টাকা মেরে নাসিম আত্মগোপনে যান জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিম কার্ড ব্যবহার করে সে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকত। যারা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে তাদের থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে সে সিম পরিবর্তন ছাড়াও নানা কৌশল অবলম্বন করে আসছিল। তার একটি গোপন ঘরও আছে যেখানে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কারও ঢোকা নিষেধ ছিল।

“বর্তমান স্ত্রী সালমা তার ব্যবসাগুলো দেখাশুনা করত এবং নানা কৌশলে স্বামীকে আড়াল করে রাখত। তারা প্রতারণা ছাড়াও ভূমিদস্যুতা, মাদক, জাল টাকার ব্যবসা অত্যন্ত সুকৌশলে চালিয়ে আসছিল।”

তিনি জানান, এই দম্পতির বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। সেগুলোর মধ্যে ৫২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে জিডিও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।