মসজিদে বিস্ফোরণ: দগ্ধ দুইজনের অবস্থা গুরুতর

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ যে পাঁচজন হাসপাতালে রয়েছেন, তাদের দুজনের অবস্থা এখন সঙ্কটাপন্ন।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেরুন নাহার মেঘলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2020, 05:40 PM
Updated : 14 Sept 2020, 05:40 PM

বাকি তিনজনের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গত ৪ এপ্রিল বিস্ফোরণের পর ৩৭ জনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল।

এর মধ্যে একে একে ৩১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। একজন শুধু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা এখনও রয়েছেন হাসপাতালে আইসিইউতে।

ইনস্টিটিউটের চতুর্থ তলায় আইসিইউর সামনে করিডোরের দেয়ালে সোমবার মাথা হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় রীনা বেগমকে। তার স্বামী ফরিদ আছেন আইসিইউতে।

ভাই ফরিদের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন ফজলুল হক। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খাওয়ার সময়টা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারি। আমাগো সাথে কথাও কয়। কিন্তু আগেও যেমন দেখছিলাম এখনও তেমনই আছে।”

ময়মনসিংহ থেকে নারায়ণগঞ্জে মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে গিয়েছিলেন ফরিদ। ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে দগ্ধ হন তিনি।

দেহের ৫০ শতাংশজুড়ে আগুনের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ছটফট করছেন ৫৫ বছর বয়সী ফরিদ।

শরীরের ৪৭ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে আছেন আবদুল আজিজ (৪০)। ঘটনার সময় মসজিদের সামনেই নিজের লন্ড্রির দোকানে কাজ করছিলেন তিনি। বিস্ফোরণে দোকানের গ্লাস ভেঙে আগুনের হলকা এসে ঢোকে দোকানে।

আবদুল আজিজের ভাবি সেলিনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এতদিন আজিজের স্ত্রী হাসপাতালে ছিলেন স্বামীর কাছে। কিন্তু তার বাবা মারা যাওয়ায় গেছেন বাড়িতে।

“ডাক্তার কইছে আজিজের অবস্থা বেশি ভালা না,” বলেন সেলিনা।

হাসপাতালে ভর্তি পাঁচজনের মধ্যে ফরিদ ও আজিজের অবস্থা গুরুতর বলে জানান ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শরীরের বিভিন্ন অংশ এবং শ্বাসনালী পোড়া নিয়ে যে পাঁচজন বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি আছেন, তাদের মধ্যে ফরিদ ও আবদুল আজিজের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। তবে বাকি তিনজনও শঙ্কামুক্ত নন।”

বিস্ফোরণের পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদ

দগ্ধ অবস্থায় দুই ভগ্নীপতিকে বার্ন ইন্সটিটিউটে নিয়ে আসেন মো. রাজন ও মো. রুবেল। তাদের এক ভগ্নিপতি ইমরান হোসেন মারা গেছেন। শরীরের ২৫ শতাংশ পোড়া নিয়ে আইসিইউতে আছেন আরেক ভগ্নিপতি আমজাদ।

মো. রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যারা ভিতরে আছে তাগো ভিতরে আমজাদ ভাইয়ের অবস্থা একটু ভালো দেখা যায়। ধইরা হাঁটতে পারতেছে, কথাও কয় আমাগো সাথে।”

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসিরহাট গ্রামের আবদুল আহাদের ছেলে এই আমজাদ (৩৭)। বাকি দুইজনের মধ্যে শরীরের ৩০ শতাংশ পোড়া নিয়ে পটুয়াখালীর মো. কেনান (২৪), ২২ শতাংশ পোড়া নিয়ে ফতুল্লার নিউ খানপুর ব্যাংক কলোনির রিফাত (১৮) রয়েছেন হাসপাতালে।

গাজীপুরের আরেকজনের মৃত্যু

 এই হাসপাতালে গাজীপুরের টঙ্গীতে এসএস স্টিল মিলে তরল লোহা ছিটকে পড়ে দগ্ধ আরও একজন মারা গেছেন।

সোমবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিপন নামে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাকে নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুজনে দাঁড়াল।

এ ঘটনায় শনিবার দুলাল নামের অন্যজন একজন মারা যান।

চিকিৎসাধীন বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুরের টঙ্গী এসএস স্টিলে মিলের ফার্নেস থেকে তরল লোহা ছিটকে পড়ে চার শ্রমিককে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়।