ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ড এখনও ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৫ ওয়ার্ড এখনও ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উঠে এসেছে এক জরিপে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 09:11 AM
Updated : 13 August 2020, 07:39 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এই জরিপ চালানো হয়।

গত ১৯ থেকে ২৮ জুলাই দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় চালানো বর্ষাকালীন এই জরিপের ফলাফল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রকাশ করা হয়।

জরিপের ফলে বলা হয়, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ও দক্ষিণের ১৬ ওয়ার্ড এখনো ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এইডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি।

মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্স বা সূচকের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এইডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়।

ঢাকা উত্তরের ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৯, ৩২ ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণের ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২৫, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৫ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে এইডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে জরিপে।

উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে (কল্যাণপুর, পাইকপাড়া ও মধ্য পাইকপাড়া) ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ ৪৩.৩ পাওয়া গেছে। ১৭ নম্বর (খিলক্ষেত, কুড়িল, কুড়াতলী, জোয়ারসাহারা, অলিপাড়া (আংশিক), জগন্নাথপুর, নিকুঞ্জ-১ ও ২, এবং টানপাড়া) ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড (মীর হাজারীবাগ, ধোলাই পাড় ও গেণ্ডারিয়া) ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ পাওয়া গেছে। এই তিনটি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

ডিএনসিসির ২৯ এবং ডিএসসিসির ৩৮টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি। দুই সিটির ৫টি ওয়ার্ডে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি।

জরিপের অংশ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনের ১০০টি এলাকার ২ হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীরা। এসব বাড়ির মধ্যে ৩৭৪টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সময়ন্বয়ক জুয়েনা আজিজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান।

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু গতবছর বাংলাদেশের বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিল। সরকারি হিসাবে, পুরো বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

তবে দেশের সবগুলো হাসপাতালে ভর্তি এবং বাসায় থাকা রোগীদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদ্প্তরে না আসায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।

এরপর চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে দেখা দেয় মার্চের শুরুতে।

এই সঙ্কটের সময়ে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যেন আবার ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বাড়তে না পারে, সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকেও সিটি করপোরেশনগুলোকে সতর্ক করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে ১৩ অগাস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৩ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৩ জন।

এ বছর এখন্ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর তথ্য সরকারের নথিভুক্ত হয়েছে।

অবশ্য এ বছর রাজধানীতে এইডিস মশার ঘনত্ব গত তিন বছরের মধ্যে কম। ডিএনসিসি এলাকাগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৫টি, ২০১৯ সালে ২৪টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি ছিল।

ডিএসসিসি এলাকাগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে ৩৫টি, ২০১৯ সালে ৩৭টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ এর বেশি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগর কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মশক নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া জনগণের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। মশার ঘনত্ব কমলে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আাক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ্ কমবে।”

তবে বহুতল ভবন এবং নির্মাণাধীন ভবনে এখনও মশা পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ কারণে মশক নির্মূলে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।  

আরও পড়ুন