যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানায় নেওয়ার পর বিস্ফোরণ ঘটে, তাদের একজন শহিদুল ইসলামকে দুদিন আগেই ধরে নেওয়া হয়েছিল বলে তার স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
Published : 29 Jul 2020, 10:16 PM
শহিদুলকে গত সোমবার তুলে নেওয়ার পর পল্লবী থানায় করা জিডির কপিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেখিয়েছেন তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। ঘটনাটি র্যাবকেও জানিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তাই কোনো কথা বলছেন না।
মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদ এলাকায় সবজি বিক্রেতা আব্দুল কাদেরের ৪ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শহিদুল (২৩) চতুর্থ। পেশায় তিনি বাসচালক।
বুধবার ভোরে শহিদুলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানায় নেওয়ার পর বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে পাঁচজন আহত হন।
শহিদুলের ভাই রফিকুল (গ্রেপ্তার রফিকুল নন) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ভাইকে খোঁজার এক পর্যায়ে তারা এই খবর পান।
তিনি বলেন, বাসার কাছে আক্কাস আলীর চা-বিস্কুটের দোকান থেকে সোমবার বিকালে শহিদুলকে তুলে নিয়ে যায় মাইক্রোবাসে আসা একদল লোক।
আক্কাস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি দোকানে ছিলেন না, তার ছেলে ছিল। ছেলের মুখে তিনি শুনেছেন, একটি কালো মাইক্রোবাস তার দোকানের সামনে থামে। দুই-তিনজন নেমে অস্ত্র দেখিয়ে তার দোকানের সামনে আসে।
শহিদুল সিগারেট নেওয়ার সময় ওই দুইজন তারে কাছে এসে নাম নিশ্চিত হওয়ার পর তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
ঘটনাটি শুনেই ছুটে গিয়েছিলেন শহিদুলের বাবা আব্দুল কাদের।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দৌড়ে গিয়ে তিনি গাড়ি পাননি। পরে লোকমুখে শুনেছেন ‘ডিবি পুলিশের লোকজন’ এসেছিল, তারা তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। তখন তিনি থানায় যান।
“থানায় গেলে তারা বলে, তারা নেয়নি। ডিবি অফিসে গেলে ডিবির লোকজন বলে, যদি আইনা থাকে তিন দিনের আগে খবর পাইবেন না।”
জিডির কপি, শহিদুলের ছবি র্যাব-৪ অফিসেও দেওয়া হয়েছে বলে জানান কাদের।
এ বিষয়ে র্যাব-৪ অধিনায়ক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শহিদুলের বিষয়ে কোনো তথ্য বুধবার পর্যন্ত তার কাছে আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেনের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
রফিকুল বলেন, থানায় গিয়ে তারা তার ভাইকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার কথা বললেও ‘নিখোঁজ’ বলে জিডি করত বলা হয়, তখন তারা তাই করেন।
রফিকুল বলেন, বুধবার ভোররাতে শহিদুলের ফোন থেকে তার মোবাইলে একটি মিসড কল আসে। এরপর তিনি কল করলে অন্য প্রান্ত থেকে অচেনা একজন ‘অপারেশনে আছি, পরে ফোন দিয়েন’ বলে।
এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে শহিদুলের পরিবার। রফিকুল গভীর রাতে ভাইয়ের খোঁজে বের হয়ে যান। তার ধারণা হয়, পুলিশ তার ভাইকে নিয়ে অভিযান চালাবে।
ভোর পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেও কোনো খবর না পেয়ে ঘরে ফেরেন রফিকুল।
“দুপুরে আমার ভাবি পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তাকে (শহিদুল) গ্রেপ্তারের খবর টিভিতে দেখে আমাদের জানায়,” বলেন রফিকুল।
কাদের দাবি করেন, তার ছেলে নিরাপরাধ। তাকে কেউ ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
“যে তিন দিন ধরে গ্রেপ্তার হয়ে রয়েছে, সে কেমনে বোমা মারে এটাই আমি জানতে চাই,” বলেন তিনি।
শহিদুলের বাসার কাছেই বাসা সিএনজি অটোরিকশাচালক হারুণ অর রশিদের।
তিনি বিডিনিউজে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শহিদুলের বিরুদ্ধে আগে কোনো অভিযোগ তিনি শুনেননি। কেউ তাকে শত্রুতা করে ধরিয়ে দিয়েছে।
শহিদুলের পরিবারের এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার, পল্লবী খানার ওসিকে অনেকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ধরেননি।
পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দুপুরে পল্লবী থানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, কালশী কবরস্থানের কাছে ‘একদল সন্ত্রাসী’ অবস্থান করছে খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে পল্লবী থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও কয়েকজন ছিল, তারা পালিয়ে যায়।
“গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি ডিভাইস পাওয়া যায়, যেটি দেখতে ওজন মাপার মেশিনের মতো।”
তিনি বলেন, থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজন পুলিশকে জানায়, ওই ওজন মাপার যন্ত্রে ‘বোমা রয়েছে’।
এরপর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ওই ওজন মাপার মেশিন পরীক্ষা করেন। পরে আরেকটি বিশেষজ্ঞ দলকে ডাকা হয়, তারা পৌঁছানোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “অপরাধীচক্র, যারা মিরপুরভিত্তিক অপরাধ করে থাকে, গ্রেপ্তাররা তাদেরই সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা একটি অপরাধ করার জন্য এসেছিল, সে অপরাধ হতে পারে কাউকে খুন করা, কোনো সম্পত্তি সংক্রান্ত অথবা ডাকাতি করা। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
তবে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’ হিসেবে কাজ করছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে।
কাকে তারা হত্যা করতে চেয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বড় কোনো নেতা নয়, স্থানীয়ভাবে থাকে না অনেক ধরনের দুশমনি? সেইরকম শত্রুতা থেকে কোনো একজনকে হত্যা করার পরিকল্পনার কথা তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছে।”