সমন্বিতভাবে কাজ করলে ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা নদীসহ খালগুলোও দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
Published : 23 Jul 2020, 08:42 PM
নদী রক্ষার মহাপরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন এবং তাতে ঢাকার খালগুলো মুক্ত করার বিষয়টিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে সীমানা পিলার নির্মাণ, তীর রক্ষা কার্যক্রম ও উচ্ছেদকৃত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
খালিদ মাহমুদ বলেন, “ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবৈধ দখল আমরা মুক্ত করতে পেরেছি, আশা করছি সামনে দূষণমুক্ত করতেও সক্ষম হব। দূষণমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন।এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্ত সিটি করপোরেশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করছে। ঢাকার ভেতরের খালগুলো যেহেতু নদীগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে সেক্ষেত্রে খালগুলোও মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে চলে আসে। আমরা মনে করি আমরা যেহেতু দখলমুক্ত করেছি এবং সীমানা চিহ্নিতও করেছি, আমরা মাস্টারপ্ল্যানটা বাস্তবায়ন করতে পারলে নদীর দূষণমুক্ত পানি ও পরিবেশও আমরা রক্ষা করতে পারব।
“গত দেড় বছরে ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের সাথে আমাদের যে টাস্ক ফোর্সটি আছে, তার সভা আমরা করেছি। কিন্তু আমরা সবসময় পূর্ণ সহযোগিতা পাইনি। তবে এখন নবনির্বচিত মেয়র ফজলে নূর তাপস ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন, তাতে আমরা আশাবাদী। এই কাজে বিআইডব্লিউটিএ বা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমার তা করতে রাজি আছি। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। আমরা যদি এই অবস্থানগুলো ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমি মনে করি ঢাকার চারপাশের খালগুলো আমরা দখলমুক্ত করতে পারব এবং ঢাকার নদীগুলোকেও দূষণমুক্ত করতে পারব।”
এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাস্টারপ্ল্যানটা করে দিয়েছেন সমন্বিত কাজ করার জন্য। অতীতে ঢাকার খালগুলোকে বিভিন্ন সরকার বন্ধ করে দিয়ে কালভার্ট করে দিয়েছে। যেটা ঢাকার জন্য দুর্যোগের একটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি আমরা এই খালগুলোকে সংরক্ষণ করতে পারতাম এবং খালগুলোতে প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারতাম, তাহলে ঢাকার ভিতর দিয়েও নৌযান চলা সম্ভব ছিল। আমরা যদি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে শুধু ঢাকার চারপাশে নয়, ঢাকার ভিতর দিয়েও ছোট ছোট নৌযান চলার সুযোগ আছে। সেই লক্ষ্যেই আমরা সমন্বিত কাজ করব।”
গাজীপুরের টঙ্গী নদী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে নারায়ণঞ্জ বন্দর ঘুরে পাগলা ঘাটে এসে পরিদর্শন সমাপ্ত করেন তিনি।
এ সময় যাত্রাবিরতিতে পূর্বাচলের হরদি বাজার এলাকায় গাছের চারা রোপন করেন এবং নৌযানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, সদস্য (অপারেশন) নূরুল আলম এবং সদস্য (প্রকৌশল) এ কে এম মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষা মৌসুমে ঈদযাত্রার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নিরাপদ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আমরা নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বলেছি, কারো অব্যবস্থপনার জন্য কোনো দুর্ঘটনা যেন না হয়।”
নদীর পাশে থাকা ডকইয়ার্ড নিয়ে এক প্রশ্নে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সীমানা আমরা নির্ধারণ করে ফেলেছি। ডকইয়ার্ড সরাতে সরকারের কাছে তারা কি ধরনের সুবিধা চায়, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা আমরা চেয়েছি। সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আমরা কতটুকু সহযোগিতা করতে পারব সে বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব। তবে ডকইয়ার্ড এখান থেকে স্থানান্তর হবেই।
“নদীর চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সার্কুলার যাত্রী পরিবহনসহ নদীকে নদীর রূপে ফিরিয়ে দিতে একটি সংশোধিত প্রকল্প হাতে নিয়েছি আমরা। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই এই কাজগুলো পুরোদমে শুরু হবে।”
বালু নদীর তীরে সরকারি স্থাপনা সরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি। কে এখানে ঢুকল না ঢুকল এটা বিষয় নয়। সীমানার মধ্যে যখন আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে তখন আপনারা দেখবেন এটা সরকারের দখলে না দখলদারদের দখলে।
“বালু নদীর সৌন্দর্যটা সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়েছে আমার কাছে। দুই পাশে সবুজ একটা আবহ রয়েছে। আমরা ঠিক এই ধরনের একটা আবহ ঢাকার চারপাশে তৈরি করতে চাই। সেজন্য নদীর দুই পাড়ে আমরা হাজার হাজার বৃক্ষরোপণ করছি। শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, সংরক্ষণও করছি যেন ভবিষ্যতে নদীর পাড়ে সবুজ একটা আবহ তৈরি হয়।”