স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে আফতাবনগরে বসছে পশুর হাট

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপের মধ্যে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় রাজধানীর আফতাবনগরে কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সরে এলেও সেখানে হাট বসাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2020, 01:44 PM
Updated : 4 July 2020, 01:44 PM

ঢাকার দুই সিটির মধ্যে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এমন বিপরীতমুখী অবস্থান এলাকাবাসীকে যেমন বিস্মিত করেছে, তেমনি মহামারীর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এই এলাকায় হাট বসানোর সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

গত ১৩ জুন সরকারের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকার দুই সিটির ৪৫টি এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে আফতাবনগর, পাশের বনশ্রী, বাড্ডা, রামপুরাও রয়েছে।

আফতাবনগরের মেরাদিয়া মৌজার অংশটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন থাকলেও অধিকাংশ এলাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মধ্যে পড়েছে। দুই সিটি করপোরেশন আলাদা হওয়ার পর থেকে এই এলাকায় উত্তর সিটি করপোরেশনই অস্থায়ী পশুর হাট বসিয়ে আসছে।

এবারও আফতাবনগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই সেকশন-৩ এর খালি জায়গায় হাট বসানোর কথা থাকলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় সেখান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এক ভিডিও বার্তায় মেয়র বলেন, “জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোরবানি পশুর হাট বসাবে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

“এটি সত্য যে আমাদের শহরে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে যদি পশুর হাট বসে সেটি কিন্তু জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমি পরিবর্তন করতে বলেছি। হাট ইজারা দিয়ে হয়তো কোটি টাকা আয় করা যাবে, কিন্তু টাকার চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবার ১৪টি স্থানে হাট বসানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার তালিকায় আফতাব নগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ এবং সেকশন-১ ও ২ এর খালি জায়গা রয়েছে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় ঢাকা উত্তর হাট বসানো থেকে সরে আসার পরও কেন সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হাট বসাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি কমিটি আছে। কোথায় হাট বসানো হবে, কোথায় বসানো হবে না সে বিষয়ে ওই কমিটিই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, আমার কোনো সিদ্ধান্ত না।”

সাবরিন নিজেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে চাননি।

তিনি বলেন, “কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না। উত্তর সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত বদল করেছে এটা তাদের বিষয়।”

নিজে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও সেখানে দক্ষিণ সিটির হাট বসানোর উদ্যোগকে দৃশ্যত কোনো সমস্যা হিসেবে দেখছে না উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। 

উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো তাদের বিষয় (দক্ষিণ সিটির)।

“মেরাদিয়া এলাকা নিয়ে দক্ষিণ সিটি থেকেও আরেকটি হাট বসানো হত। এবার যেহেতু আমাদের থেকে সেখানে হাট বসানো হচ্ছে না। তখন হয়তো তারাই বসাতে পারে।”

মহামারী ছড়ানোর ঝুঁকির মধ্যে আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্তে এলাকাবাসীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন ইস্টার্ন হাউজিং প্রকল্পের এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গণমাধ্যমেই দেখেছি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে আমাদের এখানে (আফতাবনগর) এবার উত্তর সিটি করপোরেশন পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেখানে হাট বসাবে বলে জানতে পেরেছি। তাহলে তো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই গেল।”