ঢাকার ৪৫ ‘রেড জোন’ ‘লকডাউনে’ সময় লাগছে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হলেও সব প্রস্তুতি সেরে সেসব এলাকা অবরুদ্ধ করতে আরও সময় লাগছে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2020, 06:01 PM
Updated : 15 June 2020, 07:48 PM

ঢাকার দুই নগর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এক ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেও কোন কোন এলাকার কতটুকু অবরুদ্ধ করতে হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট রূপরেখার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।

এদিকে মঙ্গলবার থেকে ‘রেড জোন’গুলো অবরুদ্ধ হচ্ছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ।

তিনি বলেছেন, অবরুদ্ধ করার সার্বিক প্রস্তুতিগুলো শেষ করেই সরকারের পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক নির্দেশনা বা ঘোষণা আসব। তার জন্য কিছু সময়ও লাগবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার দুই মাসের বেশি সময় সারাদেশে ‘লকডাউন’ জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।

তবে এরপর প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এলাকা ধরে ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তার ভিত্তিতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার পরীক্ষামূলকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এরপর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবারের সভায় দেশের ‘রেড জোন’গুলো চিহ্নিত করে। তাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা ‘রেড জোন’র মধ্যে পড়ে।

লাল, হলুদ, সবুজ- এই তিন ধরনের এলাকায় কীভাবে কাজ চলবে, তা নিয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় পুরো দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হাতেই দেওয়া হয়েছে।

‘রেড জোন’গুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে কী কী বন্ধ থাকবে, কী কী খোলা থাকবে, আরেক নির্দেশনায় তা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত অনুযায়ী ‘জোনিং সিস্টেম’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনগুলো।

‘রেড জোন’ অবরুদ্ধ করার বিষয়ে সোমবার জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ ইমদাদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার ‘রেড জোন’গুলোর তালিকা তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পেয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নের নির্দেশনা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “গাইডলাইনে এ ব্যাপারে ক্ষমতা দেওয়া আছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে। সেখানে কার কী দায়িত্ব বলা আছে। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে বলতে হবে লকডাউনের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা এখনও কিছুই বলছে না। সবাই সহযোগিতা না করলে আমরা এ বিষয়টা কীভাবে বাস্তবায়ন করব?

“এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা আসা উচিৎ। আমরা হয়ত কাল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাব।”

তিনি জানান, মঙ্গলবার সভায় বসেছে ডিএসসিসি। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ সভার ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনায় ঢাকার প্রথম এলাকা হিসেবে পূর্ব রাজাবাজারের গলিপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তারাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে ‘রেড জোন’ এলাকাগুলোর বিষয়ে বিশদ কিছু বলা হয়নি। ফলে তারা এক ধরনের বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

“এখন পর্যন্ত কোনো জিওগ্র্যাফি দেয়নি। শুধু কিছু নির্দিষ্ট এলাকার নাম বলেছে। যেমন উত্তরা ও মোহাম্মদপুর; কিন্তু এ দুটি এলাকা তো অনেক বড়। এভাবে এলাকা ধরে লকডাউন দিলে তো পুরো শহর লকডাউন দিতে হবে। আমার চাচ্ছি তারা আমাদের একটা ম্যাপ দেবে, যেখানে বিস্তারিত এলাকা চিহ্নিত থাকবে। ঠিক কোন এলাকায় লকডাউন দিতে হবে।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গত ১৪ দিনে ৬০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণের যেসব এলাকা

যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

ঢাকা উত্তরের যেসব এলাকা

বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।

মঙ্গলবার থেকে লকডাউন ‘গুজব’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ সোমবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরের একাধিক এলাকা মঙ্গলবার থেকে ‘লকডাউন’ হচ্ছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা ‘একদমই ঠিক না’।

বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন এলাকা রেড জোনের আওতায় আসবে তা নির্ভর করবে সেই এলাকার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তথ্যের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।

“লকডাউন দেওয়ার আগে যথাযথভাবে মাইকিং করে, ঘোষণা দিয়েই এলাকাবাসীকে জানানো হবে। এরকম ঘোষণা দেওয়ার আগে সরকারের তরফ থেকে সেইসব এলাকার জন্য চিকিৎসা সেবা, খাদ্য সরবরাহ, নিরাপত্তা এইসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। তাই এখানে প্রস্তুতির বিষয়ও আছে। বিভ্রান্তিমূলক খবর পরে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

ফরহাদ আরও লিখেছেন, “কোনো একটি এলাকা রেড জোন মানেই যে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে, তাও না। যেমন যদি মোহাম্মদপুর এলাকা রেড জোন হয় তাহলে পুরো এলাকাই লকডাউন হবে না। এলাকার যেই অংশে বেশি সংক্রমিত রোগী থাকবেন, শুধু সেই অংশটুকুই লকডাউনের আওতায় আসবে।

“একসাথে সকল এলাকায় লকডাউন হবে, তাও না। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় হবে। এই প্রস্তুতিগুলো শেষ করেই সরকারের পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক নির্দেশনা বা ঘোষণা আসব। তার জন্য কিছু সময়ও লাগবে।”