বেতন বকেয়ায় প্লে পেন স্কুলের অনলাইন ক্লাস থেকে বাদ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বেতন দিতে না পারায় অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে ঢাকার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল প্লে পেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2020, 02:48 PM
Updated : 23 June 2020, 04:47 PM

বেতন বকেয়া থাকার পরেও অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার চার দিন পর শিক্ষার্থীদের এই ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ব্লক করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এর সত্যতা স্বীকার করে বলছে, বার বার নোটিশ দেওয়ার পরেও যেসব অভিভাবক বেতন পরিশোধ করেননি তাদের সন্তানদের আর অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের প্লে পেন স্কুলে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আর শিক্ষক আছেন আড়াই শতাধিক।

১৪ জুন থেকে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশের অনলাইন ক্লাস শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে যাদের বেতন বাকি তাদের ১৮ জুন থেকে এই ক্লাসে আর অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীকে মাসে বেতন দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। উপরের ক্লাসে বেতন ১০ শতাংশ করে বেশি।

প্লে পেন স্কুলের নবম শ্রেণি পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে কর্মস্থল থেকে ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় মেয়ের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারিনি।

“গত ১৭ মার্চ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর মার্চের বাকি সময়, এপ্রিল ও মে মাসে স্কুলে কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলেনি, ফলে বেতনও আর দেওয়া হয়নি।”

করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে টিউশন ফি। টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার বসুন্ধরায় ইংরেজি মাধ্যমের প্লে পেন স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অভিভাবক জানান, এই স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বেতন ৪০-৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়ে আবেদন দেওয়া হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি।

গত ১৪ জুন থেকে গুগল ক্লাসরুমে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু বেতন বকেয়া থাকায় ১৮ জুন থেকে মেয়েকে আর অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

এপ্রিল মাসের বেতনের সঙ্গে এক হাজার টাকা বিলম্ব ফি ধরা হয়েছে জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, প্রথম মাসে থাকে ২০০ টাকা, পরের মাসে ৫০০ টাকা এরপর সেই বিলম্ব ফি এক হাজার টাকা হয়ে যায়।

স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো কোনো অভিভাবককে সন্তানদের বেতনের ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

১ জুলাই থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর কথা থাকলেও এবার ১৫ দিন আগে সব শিক্ষার্থীকে অটোপ্রমোশন দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই অভিভাবক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন অভিভাবক বলেন, “এই মহামারীর মধ্যেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতনের জন্য চাপ দিচ্ছিল, এটা কেমন কথা। নিজেদেরই তো বেতন নেই, স্কুলের টিউশন ফি কীভাবে পরিশোধ করব?

“আমরা টিউশন ফি-তে ডিসকাউন্ট চেয়েছিলাম, তারা এনিয়ে কোনো কথাই বলেনি।”

করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে টিউশন ফি। টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার বসুন্ধরায় ইংরেজি মাধ্যমের প্লে পেন স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা।

আরেকজন অভিভাবক বলেন, “সকাল ৮টা থেকে স্কুলের ইউনিফরম পরে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে হত। ১৮ জুন সকালে আমার সন্তান ক্লাসে ঢুকতে গিয়ে দেখে তাকে ব্লক করা হয়েছে। এটা দেখে ওর মন খুব খারাপ হয়েছে।

“ওকে অনলাইন ক্লাস থেকে ব্লক করে দিয়ে তারা তাকেই একটা ইমেইল দিয়েছে। বেতন নিয়ে ওদের সঙ্গে কেন, আমাদের সঙ্গে কথা বুলক।”

বেতন কমানোর দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার শতাধিক অভিভাবক স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন বলেও জানান এই অভিভাবক।

প্লে পেন স্কুলের অধ্যক্ষ সোরাবন তহুরাকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (প্রশাসন) ওয়াহিদা ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন তো সবাই সমস্যার মধ্যে আছে, আমরা স্কুলের কথা চিন্তা করছি। অনেক অভিভাবক তাদের আর্থিক সমস্যার কথা জানানোয় তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যকের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।”

ওয়াহিদা জানান, অনলাইন ক্লাস শুরুর আগে ১১ জুনের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে অভিভাবকদের বলা হয়। এরপরেও যারা বেতন শোধ করেনি তাদের সন্তানদেরও অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

“১৮ জুন বেশ ভদ্র ভাষায় শিক্ষার্থীদের ইমেইল করে তাদের আর অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে দেওয়া হবে না তা জানিয়ে তাদের বেতন পরিশোধ করার বিষয়ে অভিভাবকদের বলতে বলা হয়।”

এই মেইল পাওয়ার পর অনেক অভিভাবক বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যাদেরন বেতন পরিশোধ করা হয়েছে তারা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়েছে। তবে অনেকেই এখনও বেতন দেননি।

করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে টিউশন ফি। টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার বসুন্ধরায় ইংরেজি মাধ্যমের প্লে পেন স্কুলের সামনে মানববন্ধনে একজন অভিভাবক।

বেতন শোধ না করায় কতজন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না সেই তথ্য জানাতে পারেননি ওয়াহিদা।

বেতন কমাতে অভিভাবকদের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের আবেদন পাওয়ার পর আমরা বলেছিলাম, আলাদা আলাদা আবেদন করতে। কারণ অভিভাবকদের প্রোফাইল দেখে ডিসকাউন্ট করতে হবে। সবাইকে তো আর ডিসকাউন্ট দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তারা বেতনের ৫০ শতাংশ ছাড় চেয়েছিলেন।”

এই স্কুলে অনলাইনে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এবং ম্যানুয়ালি ১২ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করলে কোনো জরিমানা দিতে হয় না বলেও জানান তিনি।

ওয়াহিদার দাবি, এই মহামারীর মধ্যেও তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শতভাগ বেতন দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদেপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের সব শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কাজ করি বিধায় এই প্রতিষ্ঠান নিয়েও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।

“তবে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সেভাবে হস্তক্ষেপ করি না ব করারও প্রয়োজন হয় না। তবে তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে নয়, অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বেলাল বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস, এটা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের কমন সিদ্ধান্ত। সব শিক্ষার্থী যাতে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”