‘প্রণোদনা যেন সঠিক হাতে পৌঁছায়’

করোনাভাইরাস সঙ্কটে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা যাতে সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছেন সরকারদলীয় দুজন সংসদ সদস্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2020, 06:20 PM
Updated : 19 May 2020, 04:41 AM

সোমবার সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা আয়োজিত লেটস টক অনুষ্ঠানে তারা একথা বলেন। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল- কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তরুণরা।

অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, “পৃথিবীর কোনো সরকারই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। অনেক কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কবে এই পরিস্থিতি কবে শেষ হবে, সেটা ডব্লিউএইচও-ও বলতে পারছে না।”

এই মহামারীকালে সঙ্কটে পড়া মানুষদের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার থেকে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। ১৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সকল উদ্যোক্তা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারলে এই সেবা আরও পোক্ত করতে পারি। ৫০ লাখ স্বেচ্ছাসেবীকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারলে প্রায় দুই কোটি মানুষ লাভবান হবে।”

ওয়াশিকা বলেন, “একজন তরুণ উদ্যোক্তা বা নারী উদ্যোক্তাদের জামানত নাও থাকতে হবে। জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যেতে হবে। সরকার সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এটা শেষ নয়। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে তরুণদের কীভাবে সহায়তা দেবে।

“আমরা কেউ এ ধরণের পরিস্থিতি কতদিন চলবে কেউ বুঝতে পারছে না। বেস্ট সিনারিও চিন্তা করে কাজ করছি। আমাদের দেশের প্রেক্ষিত বিশ্বের মতো নয়। প্রধানমন্ত্রী জিডিপির প্রায় ৩.৬ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। অবশ্যই দেখতে হবে প্রণোদনা যাতে সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে পারে। সহজে যাতে নিতে পারে সেটা দেখতে হবে। এটা নিয়ে কাজ করার ব্যাপার রয়েছে। সেটা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক করছে। বিভিন্ন রেগুলেটররা করছে।”

দুইবারের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, “সঠিকভাবে সঠিক সময়ে প্রণোদনাটা পৌঁছানো ডেফিনেটলি বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা নিয়ে সরকার কাজ করছে। একজন জনপ্রিতিনিধি হিসেবে সঠিকভাবে সঠিক ব্যক্তির কাছে সহযোগিতা পৌঁছানোর বিষয়ে আমি আশাবাদী।”

কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ১০টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আরেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, “সঠিক জায়গায় সঠিকভাবেভাবে, যাদের প্রাপ্য তারা যাতে প্রণোদনা পেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

“এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়ে ব্যাপক রকমের আলোচনা হচ্ছে। আমি কিছু বিস্তারিত জানি। আমরা এখনও ভেরি ক্লিয়ার না কেমন করে এই স্টাইপেনস এবং সাপোর্ট স্ট্রাকচারগুলো সকল জায়গায় যাবে।”

তিনি বলেন, “কিছু কিছু করে ত্রাণ সামগী যেটা যাচ্ছে সেটাতো যাচ্ছেই। ৩০ হাজার কোটি টাকা লার্জ স্কেল ইন্ডাস্ট্রি জন্য দেওয়া হয়েছে, ২০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে এসএমই এবং স্মল স্কেল। প্রবাসীদের আলাদা টাকা দিয়েছেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকে আলাদা…।”   

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) প্রেসিডেন্ট সারাহ কামাল প্রণোদনায় নারী উদ্যোক্তরা যাতে সঠিকভাবে সহায়তা পায়, সেজন্য সব ব্যবসায়ী সংগঠনকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিভিন্ন ব্যবসায়িক বডি আছে। সব চেম্বার থেকে নারীদের যে প্রতিনিধি আছে একযোগে চিন্তা করতে হবে। একটা চেম্বার বা সরকার একা করলে হবে এটা ভুল চিন্তা। সব ধরনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করবে হবে সমন্বিতভাবে।”

 

ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম বলেন, “সবাই করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছে। আমরা মাঠের মানুষ, গত দুই মাস ধরে থাকতে হচ্ছে। সবার আগের নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী যারাই আমরা আছি সবার আগের নিজের সেফটি নিশ্চিত করতে হবে।”

মুশফিক বলেন, “শেষ ৩০-৩২ বছরে কখনোই ঢাকায় ঈদ করা হয়নি। এটা প্রথমবার ঢাকায় একা একা ঈদ করব। আমার বাবা-মা বগুড়ায় থাকে। এখান থেকে কোথাও যাওয়ার ঝুঁকি আছে। যাবেন আবার ফেরত আসবেন। দেখা যাবে আপনি উপসর্গ নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন ওখানে আত্মীয়-স্বজন আক্রান্ত হতে পারে। এই জিনিসগুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

“নিউজে যেভাবে দেখছি মানুষ শপিংয়ের জন্য বের হয়েছে, এটা খুবই অ্যালার্মিং। একটা ঈদে নতুন একটা জামা না পরে ওই টাকাটা কাউকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে পারেন এটা অনেক বড় কাজ হবে।”

মুশফিক বলেন, “ভয় পাবেন না সচেতন হতে হবে। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এত হেল্প করছে, লাইফ স্যাক্রিফাইস করছেন তাদের সম্মান জানাতে অবশ্যই আমাদের বাসায় থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। সবাইকে মানতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন ব্রাকের নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কার্যক্রমের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভী রাসখান্দসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী কয়েকজন উদ্যোক্তা।