হাসপাতাল ও ব্যারাকে মৌসুমি ফল বিতরণের ভাবনা

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে আম, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল চাষীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2020, 10:18 AM
Updated : 16 May 2020, 10:20 AM

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সম্মুখভাগে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য আম-লিচু কিনে ব্যারাকে ব্যারাকে বিতরণের পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের পথ্যেও এবার মৌসুমি ফল যোগ করার চিন্তাভাবনা চলছে।

শনিবার বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টার এক ভার্চুয়াল সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সমাপনী বক্তব্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জানান।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিভিন্ন মতামত দেন।

এছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন এবং কয়েক জেলার ডিসি, ফল চাষী ও ব্যবসায়ী, আড়তদার, সংশ্লিষ্ট সমিতির কর্মকর্তারা এই সভায় যুক্ত হয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে যাতে ট্রাকের ভাড়া কম হয়।

“পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করা গেলে আমের বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা হবে না। এই সঙ্কটের সময়ে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।”

বিভিন্ন জেলায় ফল পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাকগুলোকে জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “একটা সুপারিশ এসেছে, বেশিরভাগ ট্রাক (ফল ও কৃষিপণ্যবাহী) বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসে। ট্রাকগুলো খালি ফেরত যায়। সেক্ষেত্রে আমরা যাতে ট্রাকের ভাড়া কমিয়ে দিতে পারি। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে আমরা দেখব। ফল, আম, লিচু ও সবজির ট্রাক হলে আমরা (ভাড়ার ক্ষেত্রে) কিছুটা, অর্ধেক বা একটা পরিমাণ ছাড় দিতে পারি কিনা, একটা প্রণোদনা দিতে পারি কিনা।”

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মৌসুমি ফল এই মধু মাসে আমরা যেমন ভোগ করব তেমনি আমাদের চাষীরা যারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এই ফল উৎপাদন করেছে, তারা যাতে ন্যায্য ও সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

ফাইল ছবি

সারা দেশে ফল বিপণনে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সামনে আনা হবে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, শুধু ফলমূল নয়, সকল কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কৃষক এবং চাষীরা যেন ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে।

মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও বেশ কয়েকজন আলোচক সভায় সরকারিভাবে ফল কিনে তা হাসপাতাল, জেলখানা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণের পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জন্য আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল দেওয়া এবং হাসপাতালগুলোতেও সরকারের পক্ষ থেকে রোগীদের পথ্যে মৌসুমি ফল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এবারের মৌসুমি ফলগুলো সুষ্ঠুভাবে বিপণনের জন্য জেলায় জেলায় মার্কেট করার ভাবনার কথা জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, খোলা মাঠ বা স্টেডিয়ামে সেসব মার্কেটে সাপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে অন্য জেলা থেকে আম আসবে।

যেসব জেলায় বেশি আম উৎপাদন হয় সেখানে আগামী বছরের মধ্যে ‘প্রসেসিং সেন্টার’ করা হবে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন কৃষিমন্ত্রী।

আম, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আমের প্রধান উৎপাদনস্থল দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় কোন জাতের আম কবে গাছ থেকে নামানো যাবে সেই সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ফল ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র দিয়ে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা; মৌসুমি ফল ও কৃষিপণ্য পরিবহনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা; ফল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের সময় কেউ যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাধ্যমে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

এছাড়া ফল পরিবহনে বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার, স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো, পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের আওতা বাড়ানো, হিমায়িত ওয়াগন ব্যহার করা, বিভিন্ন অঞ্চলে ফল পরিবহন করা ফিরতি ট্রাকের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল কমানো এবং ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকায় আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভুক্ত করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হবে বলেও কৃষিমন্ত্রী জানান।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হয়, যার মধ্যে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।

গত দেড় যুগে দেশে ফল উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে, মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণও গত এক যুগে দ্বিগুণ হয়েছে।