প্রাথমিক পর্যায়ে সংগ্রহ করা নমুনা থেকে প্রায় ১০০টি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের কাজ শুরু করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্স (সিএআরএস) ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটি ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিটির আহ্বায়ক শরীফ আখতারুজ্জামান বলেন, এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজটি শুরু করার জন্য আংশিক ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অ্যালামনাইরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও আর্থিক সংস্থানের প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
সম্প্রতি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে সংক্রমিত নতুন করোনাভাইরাসের (সার্স সিওভি-২) জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের দাবি করেন।
জিনোম হলো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনোমে নিউক্লিওটাইডগুলো কীভাবে বিন্যস্ত আছে তার লিপিবদ্ধ করাকে বলে জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই নকশার ওপরই নির্ভর করে ওই প্রাণি বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য।
যে কোনো জীবের জীনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে তার ডিএনএ কিংবা আরএনএ। মানুষের ক্ষেত্রে ডিএনএ এর নির্ধারক হলেও করোনাভাইরাসের মতো জীবাণুর ক্ষেত্রে এর নির্ধারক আরএনএ।
আরএনএ সাধারণভাবেই ডিএনএর তুলনায় পরিবর্তনপ্রবণ বলে করোনাভাইরাস বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণের ক্ষেত্রে তার রূপ বদলাচ্ছে।
“তাই আমরা প্রাথমিকভাবে ১০০টি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করার কাজ শুরু করেছি। অধিক সংখ্যক ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে একটি কার্যকর ফলাফল বের করতে চাই আমরা।”
প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ করে বাংলাদেশে কোন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে, এর সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণের যে হটস্পটগুলো, তা কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, আরএনএ সিকোয়েন্সে কী ধরনের পরিবর্তন হলে এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অথবা আমাদের দেশের আবহাওয়া এই ভাইরাসটির উপর আদৌ কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা ইত্যাদি জানা অনেক সহজ হবে।
“এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স হয়তো আমাদের আরও অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর দেবে, যা এ মুহূর্তে আমাদের সকলের অজানা।যেমন কেন এই ভাইরাস কোন কোন দেশে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায়, কেন প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আপাতদৃষ্টিতে কম সংবেদনশীল মনে হচ্ছে, এই ভাইরাস কি ভবিষ্যতে আবারও আঘাত হানতে পারে, এবং যদি তাই হয় তার তীব্রতা কী রকম হবে, এই ভাইরাসের মিউটেশনের হার কী রকম অথবা ভাইরাসটির প্রকৃত উৎস কী- ইত্যাদি বিষয় জানা যাবে।”
এছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেসব ঠিকমত কাজ করছে কিনা বা কোনো স্ট্রেইন সুপার স্প্রেডার কিনা এসব জানতে সীমিত সংখ্যক জিনোম দিয়ে পর্যালোচনা করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এছাড়া এক্সোম সিকোয়েন্সিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে যাদের মাঝে কোভিড-১৯ এর পরিপূর্ণ লক্ষণ, মাঝারি লক্ষণ অথবা কোনো লক্ষণই ছিল না এরকম তিন ধরনের পজিটিভ ব্যক্তিদের এক্সোম সিকোয়েন্সিং করা হবে।
“আমাদের জিনোমে মোট জিনের সংখ্যা প্রায় বাইশ হাজারের মতো। কোন বিশেষ জিনের বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে এই লক্ষণগত ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হয়তো জানা সম্ভব হবে। এই তথ্য জানা থাকলে আমাদের জনগোষ্ঠিকে লক্ষ্য করে ভ্যাকসিন তৈরি করা সহজ হবে। কেননা আমরা অনেক সময় দেখেছি এক দেশে তৈরি ভ্যাকসিন অনেক সময় ভিন্ন জনগোষ্ঠির উপর কার্যকর হয় না।”
শরীফ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইউজিসি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, জেবা ইসলাম সিরাজ, হাসিনা খান, মামুন আহমেদ, মোহাম্মদ নাজমুল আহসান ও এবিএম খামেদুল ইসলাম, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান এবং সিএআরএস-এর পরিচালক এম এ মালেক গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত থাকবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মলনে সভাপতিত্ব করেন জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. ইমদাদুল হক।